আমাদের বেলা হয়ে যাচ্চে। মাছও কিনতাম, কিন্তু মাঝি বলে দিয়েছিল সাধুর আখড়াতে মাছ রান্না চলবে না। নৌকো নদী পার হোল। ওপারে মাঠের মধ্যে ঠিক নদীর ধারে সাধুর আশ্রম, পাঁচ-ছ’খানি খড়ের ঘর, নিচু চালা, ছোট নিচু দাওয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নিকোনো পুঁছোনো ঘরগুলি। গোবর দিয়ে লেপা চওড়া উঠোন। উঠোনের মাঝখানে বাতাবিলেবু গাছে থোকা থোকা সাদা ফুল ও কুঁড়ি, মন মাতানো ভুরভুরে তীব্র গন্ধ দুপুরের বাতাসে।
অনেক যাত্রী আশ্রয় নিয়েচে ঘরের দাওয়ায়, বাতাবিলেবুতলার ছায়ায়। এরা কিন্তু রাঁধচে না। আখড়ায় আজ মচ্ছব, বড় বড় হাঁড়িতে খিচুড়ি রান্না হচ্চে, সাধুর শিষ্যবর্গ মচ্ছবের প্রসাদ খাবে। আমাদের মাঝি গিয়ে আমাদের কথা বলতেই সাধু বেরিয়ে এল। বিনীত ভাবে হাত দুটি জোড় করে বললে—আসুন বাবাঠাকুর। বামুনের পায়ের ধুলো পড়লো। বড্ড ভাগ্যি আমার।
বললাম—আপনার আখড়াটি বেশ ভালো দেখছি।
—আপনাদের দয়া।
আঙুল ঊর্ধ্বদিকে তুলে বললে—আর তেনার দয়া। সে জনার দয়া। তা একটা কথা হচ্চে, এসেছেন যখন দয়া করে তখন রান্নাবান্নার যোগাড় করে দিই। মা ঠাকরুণ তো আছেন।
বললাম—অন্য কোনো যোগাড়ের দরকার নেই। সব আছে আমার সঙ্গে। আপনি শুধু রান্না করবার একটা স্থান দেখিয়ে দিন আর উনুন খুঁড়বার জন্য দয়া করে একখানা শাবল যদি থাকে তো পাঠিয়ে দিন। মাঝি উনুন ছুঁড়ে দেবে এখন। ঐ মাঠে শুক্নো কাঠ পাওয়া যাবে না?
সাধু হেসে বললে—ওর জন্যি কিছু ভাববেন না। পুব পোতার ঘরখানা নিকোনো পুঁছোনো আছে, ওর দাওয়ায় নতুন উনুন পাতা আছে। কেউ রাঁধেনি সে উনুনে। কিন্তু একটা কথা বাবু—
—কি?
৬৮