বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হাত জোড় করে বললে—চাল ডাল আমি দেবো—

 —না না, কেন আপনি দেবেন? আমাদের সঙ্গে সব আছে। আমাদের শুধু একটু জায়গা দেখিয়ে দিলেই যথেষ্ট হবে।

 সাধু দুঃখিত হোল বুঝলাম ওর মুখ দেখে, কিন্তু আর কিছু বললে না।

 একটু পরে আমরা দলবলসুদ্ধ গাঙের ধারের ঘরখানা দখল করে নিজেদের জিনিসপত্তর সেখানে আনিয়ে নিলাম নৌকো থেকে। সাধু নিজে এসে দুখানা নতুন মাদুর বিছিয়ে দিয়ে গেল দাওয়ায়, বললে— মাঠাকরুণদের জন্যে একখানা মাদুর ঘরের মধ্যে দেবো এনে?

 —না, আমাদের সঙ্গে সতরঞ্চি রয়েচে।

 সাধু ডাকলে—হরিদাসী, ও হরিদাসী—ইদিকে শুনে যাও—এনাদের জল তুলে এনে দাও—একটি পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের সুন্দর বৌ আধঘোমটা দিয়ে এসে দাওয়ার নিচে দাঁড়িয়ে বললে—কি বাবা?

 —এনাদের এখানে থাকো। যা লাগে এনে দাও। তেঁতুলতলা থেকে চালা করা শুকনো বড়ার কাঠ যত লাগে এনে দাও—মা ঠাকরুণকে শুধোও কি লাগবে।

 বৌটি হাসিমুখে দাওয়ায় উঠে এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করলে। তারপর ছুটলো কাঠ আর জল আনতে। বার বার ছুটোছুটি করে সে এটা ওটা আনতে লাগলো, কেন না শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, অনেক জিনিসই আমাদের আনা হয়নি বাড়ি থেকে—যেমন, হাতা আনতে ভুল হয়েছে, জল রাখবার বালতি বা ঘড়া নেই, ডাল ঢালবার পাত্র নেই, শুকনো লঙ্কা খুঁজে পাওয়া গেল না মসলার পুঁটলিতে ইত্যাদি। আমার স্ত্রী অপ্রতিভ মুখে আমার দিকে চেয়ে আমার ঘাড়ে দোষটা চাপিয়ে দেবার চেষ্টায় বললেন—বাবাঃ যে তাড়াতাড়ি তোমার—ওতে কি সুশ্রুম্‌খুলে সব জিনিস গোছানো যায়? অত হড়বড়ানিতে মাথা গুলিয়ে যায় না?

 আমি নির্বিকার ভাবে অন্যদিকে চেয়ে থাকি।

৬৯