বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

অকুঞ্চিত, বালকের মত। একটি রেখা নেই কোথাও মুখে। অবিশ্যি সেটা খানিকটা সম্ভব হয়েচে মেদবাহুল্যের দরুন। অবাক হয়ে সাধুর দিকে আমি চেয়ে রইলাম।

 —বাবু, বিশ্বাস না হয় অম্বরপুরের কাছারীর পুরনো কাগজ দ্যাখবেন। ১৩০১ সালের বন্যের সময় আমি কাছারীতে পেয়াদা ছিলাম। তখন আমার উঠ্‌তি বয়েস। নাঠি ধরতে পারি। শড়কি ধরতে পারি।

 —তারপর?

 —তারপর এ পথে আলাম। তেনার হুকুম হোল। তা অনেকদিন ভেক নিইচি, আজ ছত্রিশ আটত্রিশ বছর হবে। বিয়েথাওয়া করিনি, এই আখড়া যেখানে দ্যাখচেন, এখানে জঙ্গল ছেল, কি গহিন জঙ্গল। বাঘ থাকতো। জঙ্গল কেটে আখড়া জমাই।

 —ভাল লাগে?

 —বড্ড আনন্দে থাকি বাবু। শিষ্যিসেবকরা আসে, সন্দেবেলা জ্যোচ্ছনা ওঠে গাঙের ধারে। ঐ গাঙের ধারের বড় ঘরখানা হোল ঠাকুরঘর। ওর দাওয়ায় বসে খোল কত্তাল বাজিয়ে হরিনাম করি। একটা কথা বাবু, পথচলতি লোক আমার আখড়ায় এলি ফিরতি পারে না। চাল দেই, ডাল দেই,―রেঁধে খাও। আমি ছোট জাত, আমাদের হাতে তো খাবা না? রা বাড়া করো, খাও, মিটে গেল। মানুষের এট্টু সেবা, তা করবার ভাগ্যি কি আমার হবে? তেনার দয়া। বাবু, তামাক সেবা করেন?

 —হ্যাঁ, তবে আমার কাছে বিড়ি আছে।

 —তামুক সেজে আনি, বসুন।

 নদীর ধারে ক্রমে বেলা পড়লো। সাধুর আশ্রমে ভিড় বেড়ে গেল খুব। মচ্ছবের কীর্তন শুরু হোল বাতাবিলেবু তলায়। সাধু সবদিকে তদারক ক’রে বেড়ায় আর মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে রসে। কিন্তু একদণ্ড সুস্থির হয়ে বসতে পায় না। এ এসে বলে,

৭১