একটা ঘড়া দাও, ও এসে বলে, একটা ঘটি দাও। সাধু উঠে উঠে গিয়ে তাদের জিনিস দিয়ে আসচে। যে যা হুকুম করচে, তখুনি তামিল করচে। এতটুকু অহঙ্কার নেই, সাধুগিরির দম্ভ নেই, যেন সবারই ও চাকর। অনেক লোক আখড়ার বড় উঠানে, ইতস্ততঃ রেঁধে খাচ্চে। সবাই মচ্ছবের ভাত খাবে না বুঝলাম।
একবার হরিদাসী এসে বললে—বাবা, নামযজ্ঞ শেষ হয়েছে, কিছু মুখে দেন এবার। সকাল থেকে খাননি। সাধু বললে—আগে ওদের সকলকে পাতা ক’রে বসিয়ে দাও। আমার খাওয়ার জন্যি ব্যস্ত কেন? বেলা পাঁচটা হবে। আশ্চর্য হয়ে বললাম—সকাল থেকে কিছু খাননি?
হরিদাসী বললে—বাবার ওই রকম। সন্দের আগে একবার খান। অন্যদিন সকালে পেঁপে খান, কলা খান, আজ তাও খাননি। আপনি কিছু না মুখে দিলে আমি খেতে বসবো না বাবা।
সাধু হেসে বললে—আচ্ছা যা মা। একটু গুড়জল নিয়ে আয়। মাল্সা ভোগ নিবেদন হয়েচে? যা, বাবুদের জন্যি একটা ভালো দেখে মাল্সা নিয়ে আয় দিকি আগে। দুখানা পাটালি বেশী করে দিয়ে আনিস। বাবুদের মাল্সা ভোগ খেতে কোনো আপত্তি নেই তো?
—না, আপত্তি কিসের?
হরিদাসী চলে গেল এবং খানিক পরে একটা মাল্সা ভোগ আমাদের সামনে নিয়ে এসে রাখলে। রান্না হচ্ছিল পাশের ঢেঁকিশালের এক কোণে। হরিদাসী সেদিকে তাকিয়ে বলে উঠলো—বাবু, আপনাদের রান্না নেমে গিয়েচে। কলার পাতা কেটে আনি, জায়গা করে দিই—খেতে বসুন, বেলা নেই।—সে আবার চলে গেল।
জিগ্যেস করলাম—বৌটি কে?
—ওরা গোয়ালী। কাছেই কামদেবপুরে বাড়ি। আমাকে বড্ড ভক্তি করে। একেবারে যেন আর জন্মের মেয়ে কি মা!
৭২