বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ওরা স্বামী-স্ত্রী আমাদের এখানে মচ্ছবের অন্নভোগ খায়। অনেকে খায়।

 আমাদের খাওয়ার সময় সাধু কতবার যে এল গেল, হাতজোড় করে ঢেঁকিশালের বাইরে দাঁড়িয়ে রইল। খাওয়ার শেষে যখন হরিদাসী বড় একবাটি জ্বাল দেওয়া দুধ হাতে ঢুকলো, তখন আমরা প্রতিবাদ জানালাম। দুধ কেন আবার? হরিদাসী জানালে এ দুধ তার নিজের হাতে জ্বাল দেওয়া, খেতে কোনো আপত্তি হবার কারণ নেই।

 সাধু বললে—সেবা করুন বাবু। আমি ওরে বলেছিলাম বাবুদের জন্যে দেড় সের দুধ আলাদা করে ক্ষীরের মত জ্বাল দ্যাও। ওঁদের খাওয়ার কষ্ট হবে।

 আহারাদির পর বেলা একেবারে গেল। অম্বরপুরের মাঠের বন্য কুলগাছগুলোর পেছনে টক্‌টকে রাঙা সূর্যটা অস্ত যাচ্চে। লেবুফুলের সুবাস ছায়াস্নিগ্ধ বাতাসকে মদির করে তুলেচে। শুকনো কষাড়ঝোপের গন্ধ আসচে গাঙের ধার থেকে। মেলা-ফেরত যাত্রীরা আখড়ার সামনে গরুর গাড়িতে উঠে নিজের নিজের গ্রামে রওনা হচ্চে। খেয়াঘাটে একখানা যাত্রীবোঝাই নৌকো এপারের দিকে আসচে। মেলা থেকে যারা বাড়ি ফিরচে তাদের কারো হাতে তেলেভাজা পাঁপরের গোছা, কারো হাতে একটা কপি, কারো হাতে নতুন বঁটি।

 মাঝি আবার ওপারে গেল মেয়েদের নিয়ে। যাবার আগে অপরাহ্ণের ছায়ায় আর একবার মেলা দেখতে চায় মেয়েরা। আমি গেলাম না। সাধুর সঙ্গে বসে গল্প করছি দেখে স্ত্রীও কিছু বললেন না।

 সাধু দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বললে—যাক, এ বছরের মত মেলা শেষ হয়ে গেল। আবার যদি বাঁচি আসচে বছর, তখন আপনার সঙ্গে দেখা হবে। আসবেন তো বাবু?

৭৩