বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বাবা অবাক, বদ্যিনাথ কাকা অবাক, হীরু পণ্ডিত অবাক, আমাদের তো কথাই নাই। গরীব হাজারি খুঁড়ি একটি রাশ নগদ টাকা ঢালচে তার ছেঁড়া নেকড়ার পুঁটুলি খুলে।

 বাবা বললেন—এ কিসের টাকা? এত টাকা কেন এনেচ? তুমি পেলে কোথায়?

 হাজারি মুখে ঘোমটা টেনে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। বললে—উনি দিয়ে গিয়েছেন। আপনার ছেলে। আপনার কাছে রাখুন।

 এতক্ষণে আমরা সবাই ব্যাপারটা বুঝলাম। হাজারি টাকাটা গচ্ছিত রাখতে এনেচে বাবার কাছে।

 বাবা বললেন—টাকাটা আমার কাছে রাখবে?

 —হ্যাঁ বাবা।

 —কত টাকা আছে?

 সে বললে—চারশো। আপনি গুনে দেখেন।

 বদ্যিনাথ কাকা টাকা গুনে দেখলে ঠিক চারশো টাকাই আছে। বাবা বললেন—চারশো টাকা পুরোপুরি রাখতে নেই। এক টাকা কম কি এক টাকা বেশী রাখতে হয়। এক টাকা তুমি নিয়ে যাও। কোথায় এতদিন টাকা রেখেছিলে?

 —ঘটির ভিতর বাবা।

 —একটা কথা শোনো গয়লা-বৌ। তুমি গরীব মানুষ, টাকাটা দুই-এক টাকা করে নিও না। এতে টাকা খরচ হয়ে যাবে, অথচ তোমার কোন বড় কাজে আসবে না।

 —বাবা, আপনি যা বলেন, তাই করবো।

 হাজারি চলে গেল।

 বদ্যিনাথ কাকা বললে—দেখলে অম্বিক, ধুকড়ির ভিতর খাসা মাল! কে জানতো যে ওর ঘরে ঘটির মধ্যে তিনশো চারশো টাকা আছে? ঝি-বৃত্তি করে সংসার চালায় এদিকে; আজকাল মানুষ চেনা দায়।

৭৮