বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —যাও, কাজ করগে। সে কথায় তোমার দরকার কি?

 এই ঘটনার পর মাস পাঁচ ছয় কেটে গেল। আবার আমরা বসে হীরুঠাকুরের কাছে ধারাপাত মুখস্থ করচি।

 এমন সময়ে হাজারির ছেলে বলাই এসে কাঁদো কাঁদো সুরে বদ্যিনাথ কাকাকে বললে—মা মারা গিয়েচে নায়েব মশাই।

 বদ্যিনাথ কাকা চমকে উঠে হাতের কলম ফেলে বললে—তোর মা? কোথায়—কই—তা তো জানিনে—এখানে মারা গিয়েচে?

 —না। মোর ভগ্নীপতির বাড়ি, কালোপুরে।

 —কবে গিয়েছিল?

 —তা আজ দুমাস। মুইও তো সেখানে ছিলাম।

 একটু পরে বাবা এলেন বাড়ির ভিতর থেকে। বলাই গিয়ে প্রণাম করে দাঁড়ালো বাবার সামনে। বদ্যিনাথ কাকা বললে—শুনলে অম্বিক, হাজ্‌রি মারা গিয়েছে।

 —সে কি?

 —হ্যাঁ। ও তাই বলচে।

 —বলিস কিরে বলাই, শ্রাদ্ধ হয়ে গিয়েচে?

 —তা হয়েল।

 —তা তুই কি মনে করে এলি এখন?

 —সে বলবানি। এখন মেলা নোকের ভিড়। নিরিবিলি বলবানি।

 বাবা স্বভাবতই ভাবলেন যে বলাই টাকার জন্য এসেচে। কিন্তু তার বদলে সে যা বললে তাতে বাবা একটু অবাক হয়েই গেলেন।

 কথাটা যখন বললে তখন বদ্যিনাথ কাকাও সেখানে ছিল।

 বাবা বললেন—কি কথা বলবি বলাই?

 —মোদের ঘরের চাবিটা নায়েব মশায়কে খুলে দিতে বলুন। ঘরে একটা ভাঁড়ে তিনশো ট্যাকা আছে, মা মরণকালে মোরে বলেচে।

৭৯