বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হীরুঠাকুরের কাছে তখন আমরা পড়চি। সতীশ ঘোষ এসে বাবাকে প্রণাম করে বললে—সে হয়ে গিয়েচে। আপনাকে আর (আমাকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে) এই খোকাবাবুকে আর এই নায়েববাবুকে একবার যেতে হচ্চে কালোপুর—

 বাবা বললেন—মানে?

 —মানে, আপনাদের বলাই আজ তিনদিন হোল গরু চরাতে গিয়ে বাজ পড়ে মারা গিয়েচে।

 —বাজ পড়ে!

 —আজ্ঞা হ্যাঁ। মরে মাঠেই পড়ে ছিল। সন্দের সময় টের পেয়ে তখন সবাই গিয়ে তাকে দেখে, পড়ে আছে। নিয়তির খেলা, আপনিই বা কি করবেন, আমিই বা কি করবো। এখন চলুন, অপঘাতে মিত্যু, তিনদিন অশৌচ, কাল তার শ্রাদ্ধ। সেই টাকাটা আপনি যেমন হুকুম দেবেন, আপনার সামনে খরচ করবো।

 ব্যিনাথ কাকা আর বাবা পরদিন কালোপুর গেলেন, সঙ্গে আমি। আশ্চর্য হলাম আমরা সকলেই সেখানে গিয়ে। সতীশ ঘোষ অবস্থাপন্ন গৃহস্থ, আটচালা বড় ঘর, চণ্ডীমণ্ডপ, সদর অন্দর পৃথক। সবই ঠিক, কিন্তু লোকজনের সমারোহ, আয়োজন দেখে আমরা তো অবাক। চারশো টাকায় এত লোক খাওয়ানো যায় না, এমন সমারোহ করা যায় না। হাজারি খুঁড়ির বার্ষিক সপিণ্ডকরণ শ্রাদ্ধও ওই সঙ্গে হোল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত লোক খাওয়ানোর বিরাম নেই। আজ থেকে ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগের কথা। সস্তাগণ্ডার দিন ছিল বটে, তবুও সাত আটশো টাকার কমে সে রকম খাওয়ানো যায় না, তত সমারোহই করা যায় না। আর কি যত্নটা করলে আমাদের সতীশ ঘোষ! লুচি, ছানা, সন্দেশ, দই। সব সময়ে হাতজোড় করেই আছে।

 বাবা বললেন—সতীশ, এ কি ব্যাপার? তোমার ঘর থেকে

৮৬