কত খরচ করলে? তুমি তাদের কেউ হও না, জ্ঞাতি নও, কুটুম্ব নও, তাদের জন্য এত টাকা—
সে হাতজোড় করে বললে—দেবতা, টাকা তো ময়লা মাটি। আপনি হুকুম দেলেন। বলি, করতে যদি হয় তবে ভিন্ গাঁয়ের মা আর ছেলে বেঘোরে মারা গেল, ওদের শ্রাদ্ধ একটু ভাল করেই করি। আপনি খুসি হয়েচেন, দেবতা?
বদ্যিনাথ কাকা যে অত জাহাঁবাজ ঘুঘুলোক, কালোপুর থেকে ফিরবার পথে বললে—না সত্যি, হাজারি খুঁড়ির পুন্যি ছিল। তাই টাকাটার সদ্ব্যয় হোল। ভালো হাতে পড়েছিল টাকাটা।
ছেলেবেলার কথা এ সব। তখন পল্লীগ্রামের লোক এমনি সরল ছিল, ভালো ছিল—আজ বাবাও নেই, সে সতীশ ঘোষও নেই। এখন দূর স্বপ্নের মত মনে হয় সে সব লোকের কথা। হাজারি খুঁড়ির শ্রাদ্ধের পরে সতীশ ঘোষ আমাদের বাড়িতে অনেক বার এসেছিল। আমার ঠাকুরমাকে মা বলতো, বাবাকে দাদাঠাকুর বলে ডাকতো। সঙ্গে করে আনতো মানকচু, আখের গুড়, ঝিকারহাঠি বাজারের কদমা আর জোড়া সন্দেশ। কখনো কখনো ভাঁড়ে করে গাওয়া ঘি আনতো। আমার বড়দিদির বিয়ের সময় ওদের বাড়ির ঝি-বোয়েরাও নিমন্ত্রিত হয়ে এসেছিল। একখানা ভাল কাপড় দিয়েছিল বিয়েতে।
বাবা মারা যাওয়ার পরে আমরা দেশ ছেড়ে বিদেশে যাই। শুনেছিলাম সতীশ ঘোষ মারা গিয়েচে বহুদিন। আর কোন খোঁজখবর রাখিনে তাদের।
৮৭