বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —এখন হাঁটতে পারব না, স্যার!

 —বেঞ্চিতে শুয়ে পড়। আয় দিকি হাত দেখি—

 হাত দেখতে হোল না, গায়ে হাত দিয়েই বললেন—এঃ, বড্ড জ্বর যে! গা পুড়ে যাচ্চে। শুয়ে পড়।

 শুয়েই পড়ি বেঞ্চিতে।

 তারপর জ্বরে কখন অজ্ঞান হয়ে গিয়েচি। যখন জ্ঞান হোল তখন আমতলার স্কুল-বোর্ডিংয়ে আমাদের ক্লাশের গোপালের তক্তপোশে শুয়ে আছি।

 গোপাল আমার পাশে দাঁড়িয়ে; বললে—কেমন আছিস বিনোদ?

 সে কোথা থেকে দৌড়ে এসেচে। গায়ে ঘাম, মুখ রোদে রাঙা হয়েচে। বললাম—দৌড়ুচ্ছিলি?

 —হাঁ, ষাঁড় তাড়াচ্ছিলাম—হেড্ মাস্টারের কপিক্ষেত সাবাড় করেচে।

 —আমার গায়ে হাত দিয়ে দ্যাখ—জ্বর আছে?

 —হুঁ! বেশ আছে। বাড়ি যাবিনে?

 —হাঁটতে পারলেই যাবো।

 —তাই যা। এখানে শোবার জায়গা নেই, কোথায় থাকবি? বাড়ি যা।

 বাড়ি যাবো কোথায়, তাই ভাবি। এ আমার নিজের বাড়ি নয়। যাঁর বাড়ি থাকি, তিনি বাড়ি-বাড়ি ঠাকুরপুজো করে বেড়ান। তাঁর বাড়িতে খুব খাটতে হয় আমাকে, তাঁর ছোট মেয়েটাকে সর্বদা কোলে করে বসতে হয়। একটু যদি কেঁদে ওঠে খুকি, তার মা আমার উপর চটে যান।

 একদিন মনে আছে, স্কুল থেকে বাড়ি গিয়েচি, খিদেয় সমস্ত শরীর হালকা হয়ে গিয়েচে। খুকিকে আমার কোলে দিয়ে তার মা রান্নাঘরে ঢুকলেন। আমি আসবার আগে থেকেই খুকি কাঁদছিল। আমার

৮৯