বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আমার তো বড্ড উপকার হচ্চে ওঁকে দিয়ে! কুটোটুকু ভেঙে দুখানার উপকার নেই। শুধু সেবা করো। বার্লি রে—সাবু রে—

 কিছুই করতে হয় না ওঁকে। আমি ওঁকে কখনো কষ্ট দিইনে। আমার রোজ জ্বর লেগেই থাকে। ওঁকে ডাকতে বা কিছু বলতে আমার লজ্জা হয়। উনিও আমার কাছে বড় একটা আসেন না। মিথ্যে বলব না, সে বরং পুরুত মশায় যত রাত্রেই ফিরুন না দাবা খেলে, আমার অসুখ হয়েচে শুনলে আমার শিয়রে এসে বসে আমার হাত দেখবেন; গায়ে হাত দিয়ে জ্বর দেখবেন। স্ত্রীকে ডেকে বলবেন সাবু কি বার্লি করে দিতে। নিজে কাছে বসে খাওয়াবেন। সকালে উঠে গোবিন্দ ডাক্তারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবেন ব্যস্ত হয়ে—ও ডাক্তারবাবু, বিনোদ যে অমন ভুগতে লাগলো! পরের ছেলে আমার বাড়ি আছে, অমন করে পড়ে থাকলে মন বড় ব্যস্ত হয়। ওর অসুখের একটা বিহিত করুন।

 পুরুত মশাইকে দেখলে বাবার কথা মনে পড়ে। দুজনই নিরীহ; কেউ ওদের মানে না, বরং ওঁরাই সবাইকে ভয় করে চলেন!

 বড় যদি হই, পুরুত মশাইয়ের দুঃখু আমি ঘোচাবো। ওঁর ছেলে নেই। আমি ওঁর ছেলে হবো। না, ওঁদের বাড়ি আমি এখন যাবো না। জ্বর আমার এবার খুব বেশি। হয়তো আরও বাড়বে।

 গোপালকে আমি বললাম—ভাই, আমি মার কাছে যাবো।

 —মার কাছে যাবি। তোদের গাঁয়ে? সে এখান থেকে ছ’ কোশ রাস্তা। নদী পার হতে হবে কেউটেপাড়ার খেয়াঘাটে। পারবি কেন? এই জ্বর গায়ে—

 —তা হোক। তুই কাউকে বলিসনে। আমার পকেটে সরকারি ডাক্তারখানার ওষুধ আছে। আমি যাবো। রাত্তিরটুকু তোর খাটে থাকতে দে।

 গোপাল রেগে গেল। বললে—দায় পড়েছে তোকে থাকতে দিতে! তোর যত বাজে আবদার! বাড়ি যাবি কি করে এই অসুখ

৯১