বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গায়ে? বাড়ি যাবি বললেই হোল? আমারও খাটে নেই জায়গা। দুজনে শোবো কোথায়? আমি রুগীর সঙ্গে এক বিছানায় শুইনে। বাড়ি যা।—

 মনে বড় দুঃখু হোলো, গরীব বলে সবাই হেনস্তা করে। গোপাল যে আমার এই অসুখ-গায়ে তাড়িয়ে দেবে, তার মানেও তাই।

 আমি বাইরে এসে দাঁড়ালাম। বেলা এখনো ঘণ্টা দুই আছে। শরীরটা একটু হালকা মনে হচ্চে। এই দুই ঘণ্টা হাঁটলে কেউটেপাড়ার খেয়াঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে পারবো না? খুব পারবো। খেয়াঘাটের ইজারাদার যে ঘরে থাকে, বললে আমাকে জায়গা দেবে না একটু? গোপালের মত নিষ্ঠুর তারা নয়। পুরুত ঠাকুরের বৌয়ের মত নিষ্ঠুর তারা নয়।

 —আচ্ছা ভাই, চললাম।

 বলেই রওনা হলাম বোর্ডিং থেকে। লুকিয়ে মাঠের রাস্তা ধরলাম। আমি জানি, আমি বেশিদিন বাঁচবো না। মাকে আমার দেখতেই হবে। কারো কাছে যাবো না, মার কাছে যাবো।


 চৈত্র মাস। অথচ এমন শীত করে এখনো! বেলা খুব বেড়েচে। মেঠো পথের দুধারে ঘেঁটুফুল ফুটেচে কতো!

 বাঘজোয়ানির ঠাকুর-বাড়ি পার হয়ে ফলেয়া গ্রামের পথে পড়ে ছোট্ট খালের খেয়া। একখানা নৌকো আছে। মাঝি থাকে না, নিজেই নৌকো বেয়ে পার হয়ে ওপারে শিমুলতলায় বসি। শিমুলফুল ফুটেচে গাছটাতে, টুপটাপ করে রাঙা ফুল ঝরে পড়চে। শুকনো কঞ্চির বেড়া দিয়েচে পোড়া খালের ধারে ধারে। চাষাদের মুসুরি-ক্ষেতে মুসুরি পেকে গাছ শুকিয়ে গিয়েছে, কিন্তু এখনো মুসুরি তোলেনি। ঘেঁটুফুলের কি সুন্দর সুগন্ধ বেরুচ্চে পড়ন্ত রোদে। নিঃশ্বাস টেনে শুঁকি।

 কেবলই হাঁটচি, কিন্তু হাঁটতে পারিনে আর। পা ধরে আসচে।

৯২