ফলেয়া গ্রামের পেছনে মস্ত বাঁশবাগানে মরা শুকনো বাঁশপাতার কেমন চমৎকার গন্ধটা! বাঁশবাগানের মধ্যে দিয়ে পথটা, তারপর আবার মাঠ। মাঠের মধ্যে বড় একটা যজ্ঞিডুমুর গাছ। থোলো থোলো যজ্ঞিডুমুর পেকে টুকটুক করচে গাছ। আমার গা বমি-বমি করছিল। ডুমুরতলায় বসে বমি করলাম। গা কেমন ঝিম্ ঝিম্ করতে লাগলো। জলতেষ্টা পেলো। ঠাণ্ডা জল কোথায় পাই?
অবসন্ন হয়ে থাকলে চলবে না, মার কাছে পৌঁছতে হবে। কখনো একা এত দূর পথ হাঁটিনি। ভয় করচে। অন্য কিছুর ভয় আমার নেই। চিল্তেমারি গ্রামের শ্মশানটা রাস্তার ধারেই পড়ে। শ্মশানে নাকি কত লোক ব্রহ্মদত্যি দেখেচে, পেত্নী দেখেচে। চিল্তেমারি যেতে অবিশ্যি সন্ধ্যে হবে না। হে ভগবান, যেন সন্ধ্যা না হয়। মাকে দেখতেই হবে। তার আগে যেন সন্ধ্যা না হয়, অথবা না মরি! হে ঠাকুর!
একটা কাদের বাড়ি পথের ধারে। দরজায় দাঁড়িয়ে বললাম—একটু জল দেবে?
একটি দশ-বারো বছরের মেয়ে আমার সামনে এসে বললে—কি জাত?
—ব্রাহ্মণ।
—আমাদের জল খাবে? আমরা জেলে!
—তা হোক, দাও।
মেয়েটি একটু পরে একখানা পাটালি আর এক ঘটি জল নিয়ে এসে আমায় দিলে। আমার দিকে ভাল ক’রে চেয়ে দেখে বললে—তোমার কি হয়েচে?
—জ্বর।
—কোথায় বাড়ি?
—মনোহরপুরে।—পাটালি খাবো না। শুধু জল দাও।
জল খেয়ে আমি হেঁটে চললাম অতি কষ্টে। মেয়েটা আমার
৯৩