পাতা:নেতাজীর জীবনী ও বাণী - নৃপেন্দ্রনাথ সিংহ.pdf/১১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সুভাষচন্দ্রের জীবনী ও বাণী
৯৯

দিয়া পূর্ণতর জীবন লাভ করিব—এই আদর্শের দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত হইয়াছিলাম। স্বদেশ সেবা বা রাজনীতির পয্যালোচনা আমি সাময়িক বৃত্তি হিসাবে গ্রহণ করি নাই। এজন্য পরাধীন দেশে স্বদেশ সেবকের জীবনে যে বিপদ ও পরীক্ষা, দুঃখ ও বেদনা অবশ্যম্ভাবী, তার জন্য কায়মনে প্রস্তুত হইবার চেষ্টা করিয়াছিলাম। আমার এই ক্ষুদ্র অথচ ঘটনাবহুল জীবনে যে সব ঝড় আমার উপর দিয়া বহিয়া গিয়াছে বিঘ্ন বিপদের নেই কষ্টিপাথর দ্বারা আমি নিজেকে সূক্ষ্মভাবে চিনিবার ও বুঝিবার সুযোগ পাইয়াছি। অজানা ভবিষ্যৎকে সম্মুখে রাখিয়া যে ব্রত একদিন গ্রহণ করিয়াছিলাম তাহা উদ‍্যাপন না করিয়া বিরত হইব না। আমার সমস্ত প্রাণ ও সারা জীবনের শিক্ষা নিঙাড়িয়া আমি এই সত্য পাইয়াছি—পরাধীন জাতের সব ব্যর্থ,—শিক্ষা দীক্ষা কর্ম্ম—সব ব্যর্থ—যদি তাহা স্বাধীনতালাভের সহায় ও অনুকূল না হয়। তাই আজ আমার হৃদয়ের অন্তরতম প্রদেশ হইতে এই বাণী নিরন্তর আমার কাণে ধ্বনিত হইয়া উঠিতেছে, “স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায়রে কে বাঁচিতে চায়?”

 আত্মোৎসর্গের পবিত্র ও জীবন্ত বিগ্রহ প্রাতঃস্মরণীয় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের চরণে দেশ সেবায় আমার প্রথম শিক্ষা দীক্ষা। তাঁহার জীবদ্দশায় সকল বিপদ তুচ্ছ করিয়া তাঁহার পতাকা অনুসরণ করিছি। তাহার অবর্ত্তমানে তাঁহার লোকোত্তর চরিত্রের শিক্ষা হৃদয়ে ধারণ করিয়া ও তাঁহার মহিমাময় জীবনের আদর্শ সম্মুখে রাখিয়া একনিষ্ঠভাবে জীবনের পথে চলিব, এই সঙ্কল্প মনের মধ্যে পোষণ করি। সর্ব্ব মঙ্গলময় ভগবান আমার সহায় হউন।