পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এতখানি অত্যাচার তাঁর শরীরে সইলো না। তাই ফিরে এসে কিছুদিন তিনি টাইফয়েডে ভুগলেন। সেরে উঠতে বেশ কিছুদিন লাগলো। তাই ১৯১৫ সালে সাধারণভাবে প্রথম বিভাগে তিনি এফ. এ. পাশ করলেন, প্রেসিডেন্সী থেকে।

 কিন্তু বি. এ. পড়বার সময় দুর্যোগ দেখা দিল। এ বাধা এল আর এক দিক থেকে। জীবনের গোড়া থেকে তিনি দু’দিক দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলছিলেন। এক ধর্মের দিক, আর অপরটা হল দেশপ্রেম। ধর্মের দিক থেকে এক অধ্যায় হয়ে গেল এফ. এ. পড়বার সময়। দেশপ্রেমের দিক থেকে প্রথম আত্মঘোষণা দেখা গেল এইবার।

 সেই সময়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে ওটেন নামে একজন ইউরোপীয় অধ্যাপক ছিলেন। অধ্যাপনার ক্ষেত্রেও যারা শাসক ও শাসিতের প্রভেদ ভুলতে পারে না তাদের নীচতা সম্বন্ধে সুভাষচন্দ্র প্রথম সজাগ হয়ে উঠলেন এই ওটেনের ব্যবহারে। ওটেন সাহেব কি একটা কারণে একদিন শুধু গালাগাল নয়, একটি ছাত্রকে চড় মেরে বসলেন। ভাবটা তার এই যে, যারা পরাধীন তাদের আবার আত্মসম্মান কি, তারা ত’ চড় খাবেই। রুদ্ধ অপমানে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো ছাত্রের দল। কিন্তু এদের মধ্যেই ছিল একজন যে অদূর ভবিষ্যতে শুধু প্রতিবাদের দৃপ্তকণ্ঠে নয়, রীতিমত কামানের বজ্রনিনাদে সমস্ত অবিচার আর জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘঘাষণা করবে—বুকের রক্তের বন্যা দিয়ে ধ্বসিয়ে দেবে অন্যায়ের স্তৃপ! বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন সুভাষচন্দ্র। জাতির আত্মসম্মানের মূল্য তার কাছে সবচেয়ে বেশী। সেই আত্মসম্মানকে পদদলিত করতে তিনি দিতে পারেন না। এই ক্ষুদ্র ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত অপমান নয়, এ সমস্ত ছাত্রজাতির—সমস্ত ভারতবাসীর হতচেতন আত্মার সম্মান। এই অসম্মানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে।

 সকলে সাড়া দিলে এই আন্দোলনে। সুভাষের নেতৃত্বে সকলে গোপনে এসে জড় হল। ধর্মঘট চললো। এবং শেষে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে ছাত্রদের