পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গে মিটমাটের একটা ব্যবস্থা করলেন। ছাত্রদের স্বপক্ষেই তা হল। কিছুদিনের মত এই অধ্যাপকটি সাবধান হয়ে রইলেন। কিন্তু স্বভাব অত সহজে বদলায় না মানুষের। আর একদিন তিনি সেই পূর্ব ঘটনার পুনরভিনয় করে বসলেন। ফলে ছাত্ররা ওটেনকে ধরে বেশ করে প্রহার করলে। এবং সুভাষচন্দ্র এই বিদ্রোহের নেতা হিসেবে দু’বছরের জন্যে বহিষ্কৃত হলেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তার সঙ্গে আরও দু’জন ছাত্রের ওপর এই দণ্ডাজ্ঞা দেওয়া হল।

 মধ্যপ্রদেশ ও বেরার ছাত্র সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবার সময় এই ঘটনার উল্লেখ করে সুভাষচন্দ্র বলেন—প্রিন্সিপাল আমাকে বলেছিলেন, তুমি কলেজের যত নষ্টের গোড়া। আমার জীবনে সে এক স্মরণীয় দিন। সেই প্রথম আমি একটা মহৎ কাজের জন্য লাঞ্ছনা ভোগের আনন্দ উপভোগ করি। এই আনন্দের কাছে অন্য আনন্দ নিষ্প্রভ হয়ে যায়।

 সামান্য দু’বছর বহিষ্কার দণ্ড। সামান্য এই বীজ থেকে ফুলেফুলে সমৃদ্ধ কতবড় মহীরুহ জন্ম নেবে পরবর্তীকালে, তার সুপ্ত সম্ভাবনা ঘুমিয়েছিল এর মধ্যে। তারপর আরও বিস্তৃত পরিধি—শুধু সীমাবদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নয়—ভারতের সীমানাবও বাইরে বছরের পর বছর নিবাসন।

 ১৯১৭ সালে স্যর আশুতোষের মধ্যস্থতায় তিনি আবার বি. এ. পড়বার জন্যে ভতি হলেন স্কটিশচার্চ কলেজে। সেখানে অবশ্য নিবিরোধেই তার পড়াশোনা চলেছিল। এবং ১৯১৯ সালে যথারীতি তিনি প্রথম শ্রেণীর অনার্স নিয়ে দর্শনশাস্ত্রে বি. এ. পাশ করলেন। প্রথম শ্রেণীতে তিনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন। এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বাহিনীর উৎপত্তি হয়। তিনি এই বাহিনীতে যোগ দিয়ে স্বভাবসুলভ দক্ষতা দেখিয়েছিলেন।

 বাঙ্গলায় অগ্নিযুগ তখন সবেমাত্র শেষ হয়েছে। সবেমাত্র ঠিক বলা যায় না, তবুও সেই যুগ যে ইন্ধন জুগিয়েছিল—যে-ভাবে জাগিয়ে তুলেছিল সমস্ত দেশকে তারই রেশ নিয়ে সমস্ত দেশব্যাপী আন্দোলন আর বিক্ষোভ চলেছে শাসকের