পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সূর্যের লাল আলাে এসে পড়েছে। তাদের কানে ভেসে আসছে মৃত জালিয়ানওয়ালা বাগের রক্তস্রোতের নির্মম কল্লোল—নিশ্বাসে নিশ্বাসে বহু নির্বাপিত জীবন-বহ্নির ধূমায়িত বাতাস।······

 ছিদ্রহীন অন্ধকারের মত কঠিন নিঃশব্দ!

 পনেরাে মিনিট পর নেতাজীর চমক ভাঙ্গলাে। তিনি অস্ত্র নামাতে আদেশ দিলেন। তারপর প্রভাতের সিংহদ্বার থেকে সূর্যের আশীর্বাদের মত তাঁর বাণী শােনা গেল: আপাততঃ আমি তােমাদের ক্ষুধা, তৃষ্ণা, যন্ত্রণা, সুদীর্ঘ পথ এবং মৃত্যু ছাড়া কিছুই দিতে পারবাে না। দিল্লীর লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা তোলবার আগে পর্যন্ত তােমার সমস্ত কিছু তােমাকে ত্যাগ করতে হবে। এই পথ সুদীর্ঘ এবং কণ্টকময়। আমি তােমাদের কাউকেই আমার সঙ্গে যােগ দিতে জোর করছি না। কিন্তু দেশপ্রেমিক ভারতবাসী মাত্রই তার কর্তব্যের কথা জানে। যাদের সাহস নেই যারা এই নিদারুণ দুঃখ ক্লেশ সহ্য করতে পারবে না তারা এই সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে যেতে পারে এবং আমি কথা দিচ্ছি তাদের কোনরকম নিন্দা করা হবে না। কারণ আমি এমন একদল পরীক্ষিত পুরুষ এবং নারী চাই যারা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে।

 অন্ধকারে এবং রৌদ্রালােকে, দুঃখে এবং সুখে, চরমতম দুর্দশায এবং বিজয়ের আনন্দে আমি তােমাদের সঙ্গেই থাকব একথা তােমরা বিশ্বাস করো।·····

 তােমাদের সঙ্গে আমি আবার ভারতবর্ষে দেখা করবাে। যে কোন স্থানে যে কোন অবস্থায় থাকো না কেন, সর্বদা মনে রাখবে যে তুমি আজাদ হিন্দ্ ফৌজের সৈনিক। ভারতের স্বাধীনতাই তােমার একমাত্র ধর্ম; রক্ত চাই—রক্ত, আরও রক্ত। জয় হিন্দ্·······

 দূরে বহুদূরে ঐ নদী ছাড়িয়ে ঐ জঙ্গলাকীর্ণ ভূখণ্ড ছাড়িয়ে, ঐ পাহাড় পর্বত ছাড়িয়ে আমাদের দেশ—ঐ দেশে আমরা জন্মেছি, ঐ দেশে আবার আমরা ফিরে যাচ্ছি। স্বদেশ আমাদের আহ্বান করছে, রাজধানী দিল্লী আমাদের

১০২