পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে। অসহায় নিরন্তু নরনারীর ওপর সশস্ত্র অত্যাচার চলেছে বৃটিশ শাসনের চরম কলঙ্ক রক্তের কর্দমে পঙ্কিল হয়ে উঠলো জালিওয়ান-ওয়ালাবাগের পটভূমিতে। এর সঙ্গে সঙ্গে চলেছে খিলাফৎ আন্দোলন। মহাযুদ্ধের কত শত ত্যাগ ও আত্মবলিদানের বিনিময়ে ভারত পেয়েছে রাওলাট বিল। বিভ্রান্ত মানুষ চিনতে শিখেছে ইংরাজ শাসকের স্বরূপকে। দেশের সমস্ত নেতা প্রায় কারারুদ্ধ। মুক্তির আহ্বানে জোয়ার জেগেছে সমস্ত যুবকের রক্তে। সেই অসম্ভব উন্মাদনার যুগে বিপ্লবী সুভাষের মনে যে জাগরণের ঢেউ উঠবে সেটা আন্দাজ করতে একটুও দেরী হয়নি তার অভিভাবকদের মনে। এই জাগরণের পরিণাম ও বিস্তার যে কত সুদূর প্রসারী সেটাও তারা আশঙ্কা করেছিলেন। তাই তারা সকলে মিলে সাব্যস্ত করলেন সুভাষকে এমন একটা পড়ায় ডুবিয়ে রাখতে হবে যাতে তিনি অন্য কোনদিকে মাথাঘামাবার অবসর না পান। শেষটা ঠিক হল বিলাতে পাঠিয়ে আই. সি. এস. পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করাই ভাল। আই. সি. এস. প্রায় কঠিনতম পরীক্ষা। তার ওপর বিলাতের আবহাওয়ার মধ্যে পড়লে, সেখানকার অবাধ স্বাচ্ছন্দ্য ও বিলাসের পরিবেশের আস্বাদ পেলে আপনা থেকেই সুভাষের মন থেকে এই সব বিপ্লবের স্বপ্ন বিদায় নেবে, মিলিয়ে যাবে। তাদের এ ধরণের ধারণাটা নেহাৎ অসঙ্গত নয়। কারণ পাশ্চাত্য জীবনের বাহ্যিক আড়ম্বরের মধ্যে বহু লোকের জীবনে এরকম পরিবর্তন এসে থাকে। সেই ঐশ্বর্যের জৌলুসের এমনই একটা আকর্ষণী ক্ষমতা আছে।

 কিন্তু, সুভাষচন্দ্র তার সতর্ক বিবেক দিয়ে এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারলেন। এই বিলাস ও স্বাচ্ছন্দ্যের সামান্যতম আকর্ষণের ইঙ্গিত আসবার বহু আগে তার ডাক এসে গেছে আর একদিক থেকে—অনাড়ম্বর অন্তরের ধ্রুব দিক সে।

 তিনি জানতেন আই. সি. এস পাশ করে হাকিমের চাকরী নিয়ে প্রচুর অর্থ