পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপার্জনের লোভে নিজেকে বিদেশীর হাতে বিকিয়ে দেওয়া তার কাজ নয়। সে-পথ তার জন্যে নয়। সে-পথে পা বাড়ালে তার নিজের পথ থেকে বহুদূরে সরে দাঁড়াতে হবে, তখন হয়ত ফিরে আসবার সুযোগ আর থাকবে না। তাছাড়া এই দেশব্যাপী আন্দোলনের মাঝখানে তার প্রয়োজন আছে, তার স্থান আছে, শুধু স্থান নয়, তিনি বিশ্বাস করতেন বিশিষ্ট স্থান আছে।

 কিন্তু তবু তাঁকে যেতে হল। অভিভাবকদের পরামর্শ তিনি এড়াতে পারলেন। বন্ধুবর হেমন্ত বললে যে এই একটা বড় সুযোগ। এই সুযোগে তিনি জগতকে দেখে আসতে পারেন-স্বাধীন জগতের আসল পরিচয়...!

 বিলেতে গিয়েও তিনি তার মনের দ্বন্দ্বকে জয় করতে পারেন নি। তিনি লিখতেন যে তিনি জোর করে মনকে রাজী করালেও অন্তর থেকে সায় দিতে পারেন নি। একদিকে পড়ে রইলো নিজের দেশ... আদর্শের জন্যভূমি...কর্মক্ষেত্র আর অন্যদিকে স্বাধীন দেশের মুক্ত হওয়া...মুক্ত জীবন। একদিকে দারিদ্র-পীড়িত...দুর্ভিক্ষ বিধ্বস্ত...ভগ্নস্বাস্থ্য নরনারীর দল অন্যদিকে আনন্দ ও জীবনের তরঙ্গে অবাধ ভেসে-যাওয়া পূর্ণস্বাস্থ্য মানুষের দল...!...একদিকে নিপীড়িত নির্যাতীত হৃতসর্বস্ব মানুষের কঙ্কাল আর অন্যদিকে শাসক-শ্রেণীর অপহৃত ধনে ভোগের বিচিত্র সমাবেশ!...

 এক নতুন দৃষ্টি দিয়ে চিনতে শিখলেন সুভাষ নিজের দেশকে। সে দৃষ্টি বুঝি অস্বচ্ছ হয়ে গেল চোখের জলে!

এই সময় থেকেই তাঁর মনে নানারকম সঙ্কল্পের উদয় হতে থাকে। তিনি ভাবতে আরম্ভ করেন তার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার কথা। এবং বিলেতে যে আবহাওয়ার আকর্ষণে তার মন শান্ত হয়ে যাওয়ার কল্পনা তার অভিভাবকেরা করেছিলেন সেই আবহাওয়ার মধ্যে পড়েই তাঁর মনে বিদ্রোহের আগুন দ্বিগুণভাবে জ্বলে উঠলো।