পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আজাদ-হিন্দ-ফৌজ টোকিও ক্যাডেট নেতাজীর আর একটি অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। স্থানীয় শিক্ষাকেন্দ্রের ওপর কেবল ভরসা না রেখে আরও উচ্চতর সামরিক শিক্ষার জন্য নেতাজী ৪৫ জন ভারতীয় তরুণকে টোকিওতে পাঠিয়েছিলেন। এই দলে হিন্দু, মুসলমান এই উভয় জাতের এবং সর্ব প্রদেশের (বেশীর ভাগই বাঙ্গালী) যুবক ছিল। এঁদের অধিকাংশের বয়সই কুড়ির নীচে। প্রথমে মালয়েতে কাগজে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেই বিজ্ঞাপনের উত্তরে যাঁরা আবেদন করেছিলেন তাঁদের মধ্য থেকে ৪৫জনকে মনোনীত করে পাঠানো হয়। এই দল দুভাগে ভাগ করে টোকিওতে পাঠানো হয়। প্রথম ভাগে ১৯৪৪ সালে মার্চ মাসে ৩৫ জন ও সেপ্টেম্বার মাসে বাকী দশজন যাত্রা করেন। তবে দ্বিতীয় দল যখন যাচ্ছিল তখন শত্রুর টর্পেডো আক্রমণে জাহাজডুবি হওয়ার ফলে বিষেণ সিং নামে একজন প্রাণ হারান। বাকী সকলে জাপানীদের সাহায্যে ফিলিপিন দ্বীপপুঞ্জ ঘুরে টোকিওতে গিয়ে পৌঁছান।

 টোকিওতে ভারতীয়, চৈনিক, ও জাপানী শিক্ষানবীশদের একই শিক্ষাকেন্দ্রে একই সঙ্গে শিক্ষা দেওয়া হত। শিক্ষার মাধ্যম ছিল জাপানী ভাষা। সেই সঙ্গে জাপানের ইতিহাসও পড়তে হত। তবে জাপানীরা ভারতীয় যুবকদের সঙ্গে স্বাধীন দেশের অধিবাসীর মতই ব্যবহার করতো। টোকিওস্থিত ভারতীয়দের সঙ্গে তাঁরা ইচ্ছামত মিশতে পারতেন। ১৫ই আগষ্ট ১৯৪৫ সালে জাপানীরা আত্মসমর্পণ করার পর তাঁদের এই শিক্ষাকেন্দ্র ভেঙ্গে দেওয়া হয়। তখন তাঁরা বৃটিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তারপর আমেরিকানদের সহযোগিতায় ভারতে ফিরে আসেন। তাঁদের মুখে শোনা গেছে যে বৃটিশ অফিসারগণ তাঁদের সঙ্গে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করলেও আমেরিকানরা তাঁদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে। তাঁরা আরও বলেছেন যে জাপানীরা আত্মসমর্পণের পর তাঁদের

১৩১