পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলি এবং যা বলি তার একটা অর্থ আছে। আমার শত্রুরাও জানে যে কথার অর্থ নাই সে কথা আমি কখনও বলি না। আমি বলেছি যে, যে কোন উপায়েই হোক আর যে কোন মূল্য দিয়েই হোক স্বাধীনতা আমাদের অর্জন করতেই হবে এবং সম্ভব হলে স্বেচ্ছায় এবং আবশ্যক হলে জোর করে পূর্ণ সমরসজ্জা বা total mobilisation আমাদের করতেই হবে।

 আমি দেখে অবাক হচ্ছি যে অনেকে তাঁদের অর্থ দান করতে গিয়ে দ্বিধাবোধ করছেন, তাঁরা বলছেন এ নাকি তাঁদের সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ তাছাড়া তাঁদেব সন্তান-সন্ততি আছে। কিন্তু, যখন আজাদ হিন্দ ফৌজ জয়যাত্রার পথে অগ্রসব হতে শেষ বিন্দু রক্ত পর্যন্ত ত্যাগ করতে শিক্ষা পাচ্ছে তখন ধনী সম্প্রদায় প্রশ্ন তুলেছেন total mobilisation অর্থে শতকরা ১০ না শতকরা ৫? যাঁরা এই শতকরার প্রশ্ন তুলছেন তাঁদের আমি বলছি যে আমরা কি সৈন্যদের শতকরা ১০ ভাগ রক্ত ত্যাগ করতে এবং বাকীটুকু রক্ষা করতে আদেশ দিতে পারি?

 একদিকে যেমন তরুণের দল প্রাণ দেবার জন্যে এগিয়ে আসছে অন্যদিকে তেমনি দরিদ্রের দল তাদের সমস্ত সম্বল নিঃশেষে দান করবার জন্যে স্বেচ্ছায় ও উৎসাহের সঙ্গে ছুটে আসছে। ভারতের দরিদ্রতর শ্রেণীর লোক যেমন চৌকিদার, ধোপা, নাপিত, দোকানদার এবং গয়লার দল তাদের সর্বস্ব দিতে এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে অনেকে তাদের পকেটে যা ছিল সব দিয়েই ক্ষান্ত হয় নি তারা তাদের জীবনের সমস্ত সঞ্চয় তাদের সেভিংস ব্যাঙ্কের খাতাগুলো পর্যন্ত নিয়ে এসেছে।

 আটত্রিশকোটি মানুষকে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত করার চেয়ে আরও বৃহত্তর, মহত্তর এবং পবিত্রতর উদ্দেশ্য কি থাকতে পারে?......

 এই মর্মস্পর্শী আহ্বানের প্রত্যুত্তর পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়েরা দিয়েছিল ইম্ফলের যুদ্ধক্ষেত্রে কামানের গর্জন দিয়ে!

১৩৫