পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

স্বাধীন ভারতে তিনিই একমাত্র নেতা সেখানেও প্রতি পদে তিনি গান্ধীজীকে স্মরণ করে নিয়েছেন। আজাদী সেনাদের ওপর তাঁর নির্দেশ ছিল যে যদি শেষ পর্যন্ত পরাজয় ঘটে তাহলে গান্ধীজীর চরণতলেই তাদের শরণ নিতে হবে। গান্ধীজীকে শ্রদ্ধা করলেও তিনি বুঝেছিলেন আধুনিকযুগে গান্ধীবাদ অচল। তাঁর নিজস্ব পথ—বিপ্লবের পথকে সফল করবার জন্যেই গান্ধীজীর সঙ্গে তাঁর যত কিছু সংঘাত এবং আজাদ-হিন্দ ফৌজ গঠন করে তিনি দেখিয়ে দিয়ে গেছেন বিপ্লবের ভেতর দিয়ে, সামরিক শৃঙ্খলার ভেতর দিয়ে দেশকে কতখানি আগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। কংগ্রেস ৬০ বছরের চেষ্টায় যা পারে নি তিন বছরের মধ্যে সুভাষচন্দ্র তা করে গেলেন। আজকের দিনে কংগ্রেসেরএ ই বিপুল জনপ্রিয়তা— এই বিপুল জনসমাবেশ— নেতাদের দর্শনের জন্য এই ব্যাকুল আগ্রহ এর মূলে আছে একটি ম্যাজিক শব্দ— জয় হিন্দ। কংগ্রেস এ কথা স্বীকার করে নিয়েছে।

 তাই বলি, দক্ষিণপন্থী দল তোমাদের ঋণ পরিশোধের দিন কি এসেছে!

 আজাদ-হিন্দ-ফৌজের দ্বিতীয় ফল হিন্দু-মুসলমান ঐক্য। যে ঐক্যের অভাবে আজ আমাদের এত গৃহবিবাদ এত শক্তিক্ষয় হয়ে যাচ্ছে যে ঐক্য বৃটিশের কারসাজিতে কংগ্রেসের শত প্রচেষ্টার ফলেও সম্ভব হয় নি সেই ঐক্যের মূলভিত্তি স্থাপিত হয়ে গেছে মণিপুরের সকলজাতির সকল ধর্মের রক্ত-কর্দমে। সেই ভিত্তির ওপরই আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধের বিরাট সৌধ গড়ে উঠবে, আত্মনিয়ন্ত্রণের ভণ্ডামীর ওপর নয়। মুশ্লিম লীগ তোমরা দয়াকরে শুধু এই কথাটি মনে রেখো যে আজাদ হিন্দ-ফৌজের বীরশ্রেষ্ঠ সৈনিক শাহ নওয়াজ খান তোমাদেরই জাত ভাই। মনে রেখো ভারতের এই সন্তানের বাণী, যে বাণী দিল্লীর কেল্লায় তোমরা যখন তাঁকে রক্ষা করতে গিয়েছিলে তিনি তোমাদের দিয়েছিলেন—‘আমি যা করেছি তার সঙ্গে কোন জাতি, দল বা সম্প্রদায়ের প্রশ্ন জড়িত নেই। আমি যা করেছি তা আমার দেশমাতার জন্য করেছি কংগ্রেসই একমাত্র আমাকে সমর্থন করবার অধিকারী’।

১৩৯