পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তৃতীয় ফল, বিশ্বের দরবারে ভারতের স্বীয় মর্যাদা ও আসন লাভ। এই পরাধীন ভারতের মানুষ হয়ে, একটি মাত্র লোক পুলিশের বেষ্টনী পার হয়ে আটত্রিশ কোটি মানুষের সমুদ্র পার হয়ে, যুদ্ধরত বিদেশী রাজ্যে—শত্রুর সীমানায় পৌঁছে দু’বছরের মধ্যে অর্থ সংগ্রহ করে মানুষ সংগ্রহ করে, অস্ত্র সংগ্রহ করে এক বিরাট বাহিনী নিয়ে এসে রুখে দাঁড়ালো বিশ্বজয়ী এ্যাঙ্গলো আমেরিকানের বিরুদ্ধে, তাদের পদে পদে লাঞ্ছিত করে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দিলে বেয়নেটের আগায় শাসিত পরাধীন দেশের মাটির ওপর—এক আলাদীনের প্রদীপের গল্প ছাড়া চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে না দিলে কেউ বিংশ শতাব্দীর যুগে বিশ্বাস করতে পারতো কি?

 নির্লজ্জ বৃটিশ হয়ত বলবে, কিন্তু হেরে ত গেছে!

 আমরা বলি, মনে আছে ত, কবিগুরুর বাণী?—ঘটে যাহা তাহা সতা নহে!

 ধাপ্পাবাজ বৃটিশ হয়ত বলবে, কিন্তু তোমরা ত জাপানীর চর!

 নেতাজীর কণ্ঠে তার প্রত্যুত্তর আমরা শোনাবো—

 আমি ত্রি-শক্তির সমর্থন করে কিছু বলছি না। ত্রি-শক্তির সমর্থন করে কিছু বলা আমার কাজ নয়। বৃটেনে ভাড়াটে প্রচারকগণ আমাকে শত্রুর চর বলে অভিহিত করছে। আমার সমগ্র জীবনই বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবিরাম ও আপোষহীন সংগ্রামের সুদীর্ঘ ইতিহাস। চির জীবন ধরেই আমি ভারতমাতাব সেবক। আমার জীবনের শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি ভারতের সেবক থাকব এবং পৃথিবীর যে অংশেই আমি বাস করি না কেন, একমাত্র ভারতবর্ষের প্রতিই আমার আনুগত্য ও অনুরাগ আছে এবং চিরকাল থাকবে।

 আমি বিশেষ যত্নের সঙ্গে দু’শ বছরের ইতিহাস পড়ে দেখেছি। বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ব্যতীরেকে স্বাধীনতা লাভ হয়েছে এমন একটা দৃষ্টান্তও পাই নি। বৃটেন নিজে জগতের সব স্বাধীন রাজ্যের সাহায্যই চাইছে না, সে ভারতবর্ষের মত পরাধীন দেশগুলোর সাহায্যও চাইছে। বৃটেনের পক্ষে সাহায্য গ্রহণ করা যদি

১৪০