পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আমি হতভাগ্য নারী। যে আঘাত আমি পেয়েছি তার থেকে কোনদিন মুক্তি নেই। প-এর স্মৃতি আমায় দিন রাত্রি বিঁধছে। আমি সারা বাড়ীতে তার কণ্ঠস্বর প্রতিধ্বনিত হতে শুনছি—

 আমি কেঁদেছি—পুরো দুটি দিন দুটি রাত্রি কান্নার জলে আমার বিছানা ভিজে গেছে। কি অভিশাপ——হে ভগবান কি অভিশাপ আমার তরে তুমি রেখেছিলে। আমি ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভালবাসি; আমরা দুজনে তার জন্যে একই সঙ্গে কাজ করেছি। তাও আজ শেষ হয়ে গেল!···

 ‘প’-এর শেষ দৃশ্য আমাকে পীড়া দেয়। ক—যখন সব বর্ণনা করছিলেন আমার চোখের সামনে ছবিটা যেন স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠেছিল। সে আমি আর ভুলতে পারি নি। তাঁর কথাগুলো আমার কানে বাজছে—

 ‘ওরা শত্রুর একটা বিরাট অস্ত্রাগার উড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছিল। সে জানতো এর মধ্যে বিপদ ঘুমিয়ে আছে। সেইজন্যই এই চরম কাজটি তার অন্য কোন সহকারীকে সে করতে দেয় নি। ব্রহ্ম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের মাটিতে সে মৃত্যুকে বরণ করেছে। তুমি শোক করো না, কারণ সে শোক করে নি। কাজ সম্পূর্ণ করবার পর ওরা যখন একটা নালার থেকে ওকে খুঁজ়ে বার করলে, তখন দেখলে তার বাঁ হাতখানা উড়ে গেছে আর সর্বশরীরে ভীষণ আঘাতের চিহ্ন। সে বুঝতে পেরেছিল যে সে আর বাঁচবে না। সেইজন্যে সে তোমার ও অন্যান্য সহকর্মিদের জন্যে এই বাণীটি পাঠিয়েছিল: “বীরের মত এগিয়ে চল—তোমাদের এগিয়ে চলায় কোন বিচ্যুতি যেন না থাকে। ম’-কে—আমার প্রিয়া পত্নীকে বোলো যে আমি বীরের মত মরেছি। ভারতমাতা আজ আমায় ডাকছে। আমি জানি তার প্রতি আমার কর্তব্য আমি করে গেলাম। নেতাজী, আমি রক্ত দিয়েছি আমি জানি আমার এই রক্ত অন্য সৈনিকদের প্রেরণা দেবে। বন্ধুগণ এখানে আর দেরী করো না। তোমাদের কাজ করে যাও। আমি শীগগীরই মরে যাবো। শত্রুরা আমায় জীবন্ত পাবে না। যে পথে আমাদের ফৌজ জয় ও

১৫৫