পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 ভগৎরাম বা রহমত খাঁর প্রস্থানের পর উত্তমচাঁদ কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লেন কিন্তু তাঁর এই দুর্বলতা জয় করতে বিশেষ সময় লাগলো না। তিনি হাজি সাহেবের বাড়ীর দিকে চললেন। কিন্তু তাঁর অভীষ্ট সিদ্ধ হল না।

 বিকেল বেলা রহমৎ খাঁ এসে হাজির হলেন। উত্তমচাঁদ ও তিনি কথামত কাবুল নদের সেতুর ওপর গিয়ে হাজির হলেন। সেখানে সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে তাঁদের দেখা হল। সুভাষচন্দ্রের পরণে একটি ময়লা শালোয়ার ও ময়লা সার্ট। পায়ে বরফে ভেজা মোজা। মুখে তিন ইঞ্চি লম্বা দাড়ি, কিন্তু চোখে চশমা না থাকায় উত্তমচাঁদের তাঁকে চিনতে কষ্ট হয়েছিল।

 চারিদিকে তখন প্রবল তুষারাপাত হচ্ছে। সুভাষচন্দ্রের অনভ্যস্ত আবহাওয়ায় পথ চলতে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। তাছাড়া সকলের সন্দেহ এড়িয়েও তাঁকে চলতে হবে। যাই হোক বাড়ী পৌঁছে উত্তমচাঁদ তাঁর পোষাক বদলাতে সাহায্য করলেন। তার পর চায়ের ব্যবস্থা করলেন। সুভাষচন্দ্র উত্তমচাঁদের এই আত্মীয়তায় খুবই সন্তোষ বোধ করলেন।

 এই সময় সুভাষবাবু উত্তমচাদের কাছে তাঁর এই বিচিত্র ভ্রমণকাহিনীর কিছু কিছু বর্ণনা করেন। তিনি বলেন কোনগতিকে কাবুলে এসে পৌঁছলেও তাঁর এবং রহমৎ খাঁর দুজনেরই অচেনা জায়গার জন্য খুবই অসুবিধা হয়েছিল। মুস্কিল হয়েছিল আশ্রয়স্থান নিয়ে। স্থানীয় লোকেরা লাহোর গেটের কাছে যে সরাইয়ের কথা বলে দিলে সেখানে এসে দেখা গেল যে সেটা একটা গাধা ও উটওলাদের আস্তাবল। যাই হোক দোতলায় এক টাকা (আফগানী) ভাড়ায় একখানা অন্ধকার কুঠুরী পাওয়া গেল। সেইখানেই তাঁরা উঠলেন। ভীষণ শীত— আগুন জ্বালাতে হয়। কিন্তু ধোঁয়া বেরোবার পথ নেই। তবু কোনমতে তাঁরা ত রইলেন। সন্ধ্যাবেলার দিকে রহমৎ খাঁ চা, রুটি ও কাবাব নিয়ে এলেন। এবং দুজনে মিলে তার সদ্ব্যবহার করলেন। রাত্তিরের জন্যে দৈনিক আট আনা ভাড়ায় এক একটি বিছানা জোগাড় করা হল চৌকিদারের কাছ থেকে।

১৫৮