পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কয়দিন ধরেই একটা আফগান গোয়েন্দা ওঁদের পেছনে ঘোরাফেরা করছিল। একদিন লোকটা সরাসরি তাঁদের কুঠুরীর সামনে এসে তাঁদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে বসলো। রহমৎ খাঁ বললেন যে তাঁরা মুসাফির—সীমান্ত থেকে এসেছেন। তার পর সুভাষবাবুকে দেখিয়ে বললেন ইনি তাঁর ভাই—কালা ও বোবা—অসুখে ভুগছেন, তাঁকে নিয়ে সাখি সাহেবের তীর্থে যাবেন কিন্তু বরফ পড়ার জন্য রাস্তা বন্ধ বলে যেতে পারছেন না। এসব শুনে লোকটা প্রথমটা খুব খানিকটা মেজাজ দেখালে, বললে থানায় যেতে হবে তাঁদের ইত্যাদি। কিন্তু তারপর রহমৎ খাঁ একখানি আফগানী দশ টাকার নোট তার হাতে গুঁজে দিতে লোকটা আপ্যায়িত হয়ে চলে গেল।

 টাকা পাওয়ার ফলে লোকটা লোভে লোভে এসে ভয় দেখিয়ে আর একদিন ৫ টাকার নোট নিয়ে গেল! আর একদিন এসে বললে দারোগা সাহেব তাঁদের বিদ্রোহী মনমদ দলের লোক বলে সন্দেহ করছেন সুতরাং থানায় যেতেই হবে ইত্যাদি। অগত্যা সেদিন ১৭ টাকা দিয়ে তাকে বিদায় করতে হল। তাছাড়া টাকার সঙ্গে সুভাষবাবুর দামী হাত ঘড়িটা পর্যন্ত আদায় করে নিয়ে যেতে ভুললো না। পরের দিন লোকটা এসে জানালো যে দারোগা তার কাছ থেকে ঘড়িটা নিয়েছে সুতরাং রহমৎ খাঁর আরও ৫টি টাকা খসলো। লোকটা রোজই বলতো তোমরা যত শীগগীর পারো এখান থেকে চলে যাও আর এঁরাও ভেতরে ভেতরে উত্তমচাঁদের খোঁজ খবর করছিলেন। সুতরাং দুদিন খোঁজাখুঁজির পর উত্তমচাঁদের সঙ্গে দেখা হওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়ে গেল।

 সেদিন রাতে সুভাষবাবু বসে বসে বেতারবার্তা—বিশেষ করে যুদ্ধ সংবাদ শুনলেন। তিনি বললেন বহুদিন তিনি যুদ্ধ সংবাদ শোনেন নি! পরে অবশ্য উত্তমচাঁদ সিভিল এবং মিলিটারী গেজেট আনিয়ে তাঁকে পড়িয়েছিলেন।

 সে রাতে উত্তমচাঁদের স্ত্রী একরকম জোর করেই উত্তমচাঁদের কাছ থেকে বলিয়ে নিলেন তাঁদের এই নতুন অতিথির আসল পরিচয় কি? এবং প্রথমটা

১৫৯