পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এতে ভয় পেলেও পরবর্তীকালে দেখা গিয়েছিল যে, ৪৮ দিন সুভাষবাবু ওঁদের কাছে ছিলেন ততদিন উত্তমচাঁদের স্ত্রী তাঁকে সর্বরকমে সাবধান করে রেখেছিলেন।

 সুভাষবাবু উত্তমচাঁদের কাছে কোলকাতা থেকে কাবুলের যাত্রাকাহিনীর যে বর্ণনা করেছিলেন তা এইরকম।

 তিনি বলেন যে দু’মাস আগে যদি তিনি বেরিয়ে পড়তে পারতেন তাহলে মস্কো যাওয়া বিশেষ অসুবিধা হত না। কিন্তু কর্পোরেশনের একটা কাজ থাকায় তাঁর দেরী হয়ে যায় এবং ফলে তাঁর সঙ্গী মস্কো যাত্রা করেন বটে কিন্তু তাঁর যাওয়া হয় না। তাছাড়া ততদিন তাঁর দাড়িও বিশেষ গজায় নি।

 পলায়নের কিছুদিন আগে থেকে লোকের সঙ্গে দেখা করা বা কথা কওয়া একেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলেন কিন্তু পলায়নের কাজে যারা সাহায্য করছিলেন তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় ছিল। এবং সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক হয়ে গেলে ১৫ই জানুয়ারী রাত আটটার সময় মৌলবীর বেশে বাড়ী ছেড়ে বেড়িয়ে পড়েন। পেশোয়ারের পথে ট্রেনে সহযাত্রিদের কাছে তিনি নিজেকে জিয়াউদ্দীন বলে পরিচয় দেন এবং স্টেশন এলেই কাগজ দিয়ে মুখ আড়াল করে রাখেন।

 পেশোয়ারে পৌঁছে অপেক্ষমান নির্দিষ্ট গাড়ীতে উঠে নির্দিষ্ট জায়গায় এসে পৌঁছলেন। পেশোয়ারে দুদিন থাকার পর তিনি কাবুল যাত্রা করলেন। এই পথ অত্যন্ত দুর্গম এবং বিপদ সঙ্কুল। অবশ্য অনেকে তাঁকে এই সময়ে সাহায্য করেছিলেন বিশেষ করে লালুপুরার খান সাহেব। তিনি তাঁকে একটি বিশেষ পরিচয় পত্র লিখে দিয়েছিলেন। তবে এই সময়ে তাঁর প্রধান সঙ্গী ছিলেন রহমৎ খাঁ। আর প্রায়ই তাঁর দেহরক্ষী হিসাবে দুজন করে বন্দুকধারী পাঠান তাঁর সঙ্গে থাকতেন। তবে এই সময় থেকেই সুভাষবাবু বোবা-কালা সেজে থাকতেন। পথিমধ্যে কি ভাবে ভিস্তির থলেয় চড়ে নদী পার হয়েছিলেন এবং বরফ-পড়া রাত্রির মধ্যে খোলা লরী চড়ে মাইলের পর মাইল অতিক্রম করেছিলেন তা সত্যিই চিত্তাকর্ষক।

১৬০