পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়েছিল। তাই নিয়ে আবার দেশজোড়া আন্দোলন চললো। এদিকে দেশের জনসাধারণ ব্যাবস্থাপক সভার নির্বাচনে সুভাষবাবুকে মনোনীত করে বসল। তখন বাধ্য হয়ে সরকার পক্ষ অনশন ব্রতীদের সঙ্গে একটা সম্মানজনক করলেন।

 এর পর থেকে সুভাষবাবুর মনে ধীরে ধীরে একটা পরিবর্তন আসতে শুরু হয়। তিনি আরও গভীর ভাবে নিজেকে দেশের সঙ্গে সংযুক্ত রেখে চিন্তা কবতে আরম্ভ করেন। যদিও জেলের অনাচার অত্যাচারের মধ্যে তার শরীর ভেঙ্গে আসছিল তবু তার মনের বল যেন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই সময় তার লেখা কয়েকটা চিঠির কিছু কিছু অংশ উদ্ধৃত করে দেওয়ার প্রয়োজন বেধ করি। তাহলে তাঁর এই মনের পরিবর্তন ঠিকমত অনুধাবন করা যাবে।

 ‘আজ চৌদ্দমাস আমি জেলে। এর মধ্যে এগারো মাস কাটলো সুদৃব ব্রহ্মদেশে। সময়ে সময়ে মনে হয় যে, দীর্ঘ চৌদ্দমাস দেখতে দেখতে গেল, কিন্তু অন্য সময়ে মনে হয় যেন কত যুগ ধরে এখানে রয়েছি। ঘরবাড়ী; কারাগারের বাহিরের কথা যেন স্বপ্নের মত, প্রহেলিকার মত বোধ হয়; যেন ইহজগতে একমাত্র সত্য হচ্ছে লৌহের গারদ ও প্রস্তরের প্রাচীর। বাস্তবিক এ একটা নূতন বিচিত্র রাজ্য। আবার সময়ে সময়ে মনে হয়, যে জেলখানা দেখে নাই সে জগতের কিছুই দেখে নাই। তার কাছে জগতের অনেক সত্য প্রত্যক্ষীভূত হয় নাই। আমি নিজের মনকে বিশ্লেষণ করে দেখেছি যে, এইরকম চিন্তা ঈর্ষা প্রসূত নয়। আমি প্রকৃতপক্ষে জেলখানায় এসে অনেক শিখেছি; অনেক সত্য যাহা একসময় ছায়ার মত ছিল, এখন আমার নিকট সুস্পষ্ট হয়েছে, অনেক নুতন অনুভূতিও আমার জীবনকে সবল ও গভীর করে তুলেছে। যদি ভগবান কোনও দিন সুযোগ দেন ও মুখে ভাষা দেন-তবে সে সব কথা দেশবাসীকে জানাবার আকাঙ্ক্ষা ও স্পর্ধা আছে।

 ‘জেলে আছি—তাতে দুঃখ নেই। মায়ের জন্য দুঃখভোগ করা সে ত, গৌরবের

১৯