পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ব্যয়ে সুইটজারলণ্ডে গিয়ে চিকিৎসা করাতে পাবেন তবে সরাসরি রেঙ্গুণ থেকেই তাঁকে যাত্রা করতে হবে, ভারতবর্ষে ফিরতে পারবেন না। সুভাষবাবু উত্তর দিলেন যে এই জেলের মধ্যে তিনি মতে প্রস্তুত আছেন তবু এই সর্তে তিনি রাজী হতে পারবেন না। এই মর্মে তিনি তার দাদা শরৎচন্দ্র বসুকে যে চিঠি লিখেছিলেন তা সত্যিই প্রণিধানযোগ্য। তর শেষাংশ উদ্ধৃত করে দেওয়া গেল।

 ‘বর্তমান ঘটনার সর্বাপেক্ষা মন্দ ফল কি হইতে পাবে, তাহাও আমি চিন্তা করিয়া দেখিয়াছি, কিন্তু তথাপি আমি মনে স্থির করিয়াছি, জন্মভূমি হইতে চিরকালের জন্য নির্বাসন অপেক্ষ। জেলে থাকি মৃত্যু বরণ করাই শ্রেযঃ। এই অশুভ ভবিষ্যতের কথা ভাবিযাও আমি নিরুৎসাহ হই নাই। কারণ, কবিব উক্তিতে আমি বিশ্বাস কবি:—গৌরবের পথ শুধু মৃত্যুর দিকে লইয়া যায়। মুক্তিলাভের পূর্বে আমাদিগকে ব্যক্তিগতভাবে ও সঙ্ঘবদ্ধভাবে অনেক কষ্ট সহ করিতে হইবে। ভগবানকে ধন্যবাদ দিই যে আমি নিজে শান্তিতে আছি এবং সম্পূর্ণ নির্বিকার ভাবে সকল অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হইবার জন্য প্রস্তুত আছি। আমাদের সমগ্র জাতির কৃত পাপের জন্য আমি প্রায়শ্চিত্ত করিতেছি-ইহাতেও আমাদেব তৃপ্তি। আমাদের চিন্তা ও আদর্শ অমর হইয়া থাকিবে।

 ‘আমাদের মনোবৃত্তি জাতির স্মৃতি হইতে কখনও মুছিয়া যাইবে না, ভবিষ্যৎ বংশধরগণ আমাদের প্রিয় কল্পনার উত্তরাধিকারী হইবেন, এই বিশ্বাস লইয়া আমি চিরদিন সকল প্রকার বিপদ ও অত্যচার হাসিমুখে বরণ করিয়া লইয়া কাল কাটাইতে পারিব।’...

 এর পর সরকার ‘বাহাদুর’ আর তাকে আটক রাখতে সাহস করলেন না। ১৬ই মে ১৯২৭ সালে তিনি সম্পূর্ণ মুক্তিলাভ করলেন।

 কিন্তু এই কি সেই সুভাষ? ভগ্নস্বাস্থ্য—শীর্ণদেহ—যৌবনের সেই দীপ্তি অনেক খানি ম্লান হয়ে এসেছে-সাম্রাজ্যবাদীর নিষ্ঠুর নির্যাতনে তিলে তিলে ক্ষয় হয়ে আসছে জীবনীশক্তি।...

২৪