পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্ঘের উদ্দেশ্য প্রচার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লণ্ডনে প্রবেশ করবার অনুমতি না পাওয়ায় তাঁর অভিভাষণ ডাঃ ভাট পাঠ করে শোনান।

 এই সময়ে ভারতবর্ষে পণ্ডিত জওহরলাল কংগ্রেসের বৈদেশিক নীতি প্রচারের ওপর জোর দিচ্ছিলেন। বোধ হয় সুভাষবাবুর ইউরোপের জনপ্রিয়তার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করার উদ্দেশ্য কিছুটা প্রচ্ছন্ন হয়ে ছিল এর পেছনে। যাই হোক একদিকে যেমন সুভাষবাবু ফ্যাসিজমকে সম্পূর্ণ পরিত্যাগ না করে এবং কমিউনিজমকে অনেকক্ষেত্রে নিন্দা করে নতুন ধরণের মতবাদ গড়ে তুলছিলেন এবং জগৎ সমক্ষে প্রচার করবাব চেষ্টা করছিলেন, অপর দিকে তেমনি জওহরলাল বিশেষ করে নাৎসীবাদ ফ্যাসিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদকে নিন্দা করে কমিউনিজমকে বিশেষভাবে গ্রহণ করবার ও অনুসরণ করবার নির্দেশ দিয়ে কংগ্রেসের বৈদেশিক নীতি প্রচার করতে তৎপর হয়ে উঠলেন। অবশ্য সুভাষবাবু নাৎসী ফ্যাসি বা সাম্রাজ্য কোন ‘বাদ’কেই গ্রহণ করেন নি কিন্তু তেমনি আবার কমিউনিজমকে ভীষণ আক্রমণ করেছেন।

 জওহরলালজী লিখলেন, আমি জোরের সঙ্গে বিশ্বাস করি যে জগতের মূল সমস্যা হয় কমিউনিজম নয় ফ্যাসিজমকে গ্রহণ করা এবং আমি সর্বতোভাবে কমিউনিজমের পক্ষপাতী। আমি ফ্যাসিজম সম্পূর্ণ অপছন্দ করি···কারণ ফ্যাসিজম পরোক্ষভাবে সেই ধনিকতন্ত্রের স্বার্থসিদ্ধির একটা ঘোরালো উপায় মাত্র। ফ্যাসিজম ও কমিউনিজমের মধ্যে কোন মধ্য পন্থা নেই। দু’টোর মধ্যে একটাকে বেছে নিতে হবে এবং আমি কমিউনিষ্ট আদর্শকেই নেবো ইত্যাদি।

 সুভাষবাবু জবাব দিলেন,—এইখানে লেখক যে মন্তব্য করেছেন তা আগাগোড়াই ভ্রমাত্মক। আমরা যতক্ষণ না বিবর্তনের শেষ পরিণতি পর্যন্ত অপেক্ষা করছি —অবশ্য বিবর্তনবাদকে একেবারেই বরবাদ যদি না করা হয়— তাহলে এই দু’টোর মধ্যেই আমাদের পছন্দ সীমাবদ্ধ ক’রে রাখবার কোন যুক্তি নেই। এমন দিন আসছে যেদিন জগতের ইতিহাসে কমিউনিজম ও ফ্যাসিজমের একটা মিশ্রনের

৩৯