পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৫৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 দারুণ উৎসাহ উত্তেজনার মধ্য দিয়ে হরিপুরার কংগ্রেস শেষ হয়ে গেল। সমস্ত কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে নতুন জীবনের স্পন্দন জেগে উঠলো তাতে সকলেই বিশেষ উৎসাহিত বোধ করতে লাগলেন। রাজবন্দীরা মুক্তি পাওয়ায় বিহার এবং যুক্ত প্রদেশের মন্ত্রীরা আবার কার্যভার গ্রহণ করলেন। সুভাষবাবু তাঁর অসুস্থ দেহ নিয়েও চারিদিকে বক্তৃতা দিয়ে কংগ্রেসের ভাব প্রচার করে বেড়াতে লাগলেন। কিন্তু সেই পার্লামেণ্টারী বোর্ডের ক্ষমতা একেবারেই খর্ব হয়ে যায় নি। তাঁরা তখনও উগ্রপন্থী নেতাদের কর্তৃত্ব সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই গোঁড়া জাতীয়তাবাদী নরীম্যান ও খারের সঙ্গে তাঁদের মতানৈক্য শুরু হল। আগে হলে সুভাষবাবু এঁদের সমর্থন করে কংগ্রেস হাই কমাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ঘোষণা করতেন। কিন্তু এখন তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন পথ—যে কোন উপায়ে একটা ঘরোয়া আপোষের চেষ্টা— অবলম্বন করেছেন, তাই তিনি কিছু বলতে পারলেন না। নরীম্যান ও খারে কংগ্রেসের অফিস থেকে বিতাড়িত হলেন। কিন্তু এই সামান্য ঘটনা কতবড় একটা দুর্যোগের পূর্বসূচনার ইঙ্গিত দিয়েছিল তখন কেউ তা সন্দেহ করতে পারে নি।

 হরিপুরার পর ত্রিপুবীর অধিবেশন অবিশ্বাস্য হলেও নিষ্ঠুর রকমের সত্য!

 এতদিন দক্ষিণপন্থী ও বামপন্থী দলের মধ্যে যে মতানৈক্য চলছিল সেটা সাধারণের মধ্যে খুব বেশী প্রকাশ্য হয়ে ওঠে নি। উপরন্তু সুভাষবাবুর সভাপতিত্বের সময়ে তিনি মিটমাট করবার যে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন তার ফলে দুই দলের সম্বন্ধ অনেকটা সহজ হয়ে এসেছিল। তবে একটা প্রশ্ন নিয়ে মনে মনে খুবই মতদ্বৈধ চলছিল তখনও, সেটা হল ফেডারেশন ব্যবস্থা প্রবর্তনের সমর্থন নিয়ে। সুভাষবাবু বরাবরই উগ্রপন্থী, তিনি কোন দিক দিয়েই বৃটিশের সঙ্গে সামান্যতম আপোষেরও পক্ষপাতী ন’ন। এদিকে দক্ষিণ পন্থী আপাততঃ ফেডারেশন ব্যবস্থা মেনে নিতে চায়। দক্ষিণ পন্থী নেতাদের জানা ছিল যে সুভাষবাবু যতদিন

৫৩