পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সুভাষচন্দ্রের মহাভাগ্যবতী জননী প্রভাবতী দেবী অত্যন্ত সরলপ্রাণা ও ধর্মভাবপরায়ণ মহিলা। তার সংশিক্ষার গুণে সুভাষচন্দ্রের ভাই বোনেরা সহজ সরল ও অনাড়ম্বর পরিবেশের মধ্যে মানুষ হয়ে উঠেছিলেন। বহু মহামানবের জীবনে যেমন দেখা গিয়াছে সুভাষচন্দ্রের জীবনেও তেমনি দেখা যায় যে তার এই বিরাট প্রতিভার পশ্চাতে রয়েছে তার মাতার স্নেহ, শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা। এবং তাব মায়ের স্বভাবগুণেই সুভাষের জীবনের ওপর সাধারণ ধর্মভাব খুব প্রভাব বিস্তার করেছিল। আধুনিক জগতের বহু বিপ্লবী জননায়কের জীবনে যেমন দেখা যায যে তাদের জীবনে শুধু একটা দিকই বড় হয়ে দেখা দেয়,—বিপ্লব, কিন্তু সুভাষচন্দ্রের বাহিক জীবনের পশ্চাতে রয়ে গেছে একটা স্বভাব কোমল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ একটি সহজ সুন্দর অধ্যায়। এই দিক থেকে সুভাষের জীবনের সঙ্গে অনেকে স্ট্যালিনের জীবনের মিল খুঁজে পেয়েছেন। স্ট্যালিনও অত্যন্ত ধর্মভাবের আবহাওয়ার মধ্যে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার মায়ের কাছ থেকে তিনি ধর্মানুপ্রেরণা পেয়েছিলেন খুবই। এমন কি তার মায়ের ইচ্ছা ছিল যে স্ট্যালিন বড় হয়ে একজন ধর্মযাজক হবেন। কিন্তু এইখানেই স্ট্যালিনের মায়ের ও সুভাষের মায়ের মধ্যে প্রভেদ। সুভাষের মা কোনদিন চান নি যে সুভাস বড় হয়ে ধর্মনায়ক হয়ে উঠবে, তিনি চেয়েছিলেন তার কনিষ্ঠ পুত্র সুভাষ অন্যান্য কৃতী সন্তানদের মতই সকল দিকে সাফল্যলাভ করবে। তবে সমস্ত ব্যবহাবিক জীবনের পশ্চাতে এক সহজ সুন্দর ধর্মভাব আরও মহত্তর সার্থকতার দিকে মানুষকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়— -এই যে ভারতীয় সাধনার মূল নির্দেশ এইটেই তিনি ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছিলেন সুভাষের জীবনে। এবং সেই দিক থেকে সুভাষের জীবনে এই আদর্শের এতটুকুও ব্যতিক্রম দেখা যায় নি।

 সুভাষচন্দ্রের আরও ছয়জন ভাই—সকলেই তার থেকে বড়, জীবিত সকলেই জীবনে লব্ধ প্রতিষ্ঠ—কেউ আইন ব্যবসায়, কেউ চিকিৎসাবিদ্যায়। তাই কিশোর সুভাষ যখন প্রোটেষ্ট্যাণ্ট ইউরোপীয়ান স্কুলে গিয়ে ভর্তি হলেন তখন আর একটি