পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মাত্র সেইহেতু তাঁর পরাজয় আমাকেই বেশী আঘাত করেছে। সংখ্যালঘিষ্ট দল সংখ্যাগরিষ্ঠের কর্মপন্থার সর্ববিধ সাফল্য কামনা করবে। যদি তারা এই কর্মপন্থার সহিত সামঞ্জস্য না রাখতে পারে তাহলে তারা কংগ্রেস ত্যাগ করে চলে আসবে। যদি তারা পারে তাহলে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠের শক্তিবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। সংখ্যালঘিষ্ঠরা কোন মতেই কোন প্রতিবন্ধকের সৃষ্টি করবে না। যখনি তারা সাহায্য করতে পারবে না তখনই তারা নিজেদের সরিয়ে রাখবে।

 এই বিবৃতির পর সাধারণের মধ্যে কারও আর বুঝতে বাকী রইল না যে অন্তরে অন্তরে মহাত্মাজী সুভাষবাবুর ওপর সমস্ত সহানুভূতি হারিয়েছেন। এই মতামত পরোক্ষে প্যাটেল-আজাদ-রাজেন্দ্রপ্রসাদের দলের মতামতেরই পরিভাষা মাত্র। এর পর কংগ্রেসের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রশ্ন নিরর্থক। সকলেই স্পষ্ট উপলব্ধি করলে নির্বাচনে জিতলেও সুভাষবাবুর নিজস্ব মতের স্বাধীনতাকে গান্ধীজী পর্যন্ত অন্তর থেকে সমর্থন করতে পারেন নি। অথচ অপরপক্ষে আমরা দেখেছি, এতবড় বিজয় আনন্দের মধ্যেও সুভাষবাবু এতটুকুও শ্রদ্ধা হারান নি গান্ধীজীর ওপর, উপরন্তু গান্ধীজীর শ্রেষ্ঠত্ব শ্রদ্ধার সঙ্গে স্বীকার করে নিয়েছেন। গান্ধীজী যখন ভাঙ্গনের সামান্যতম ইঙ্গিত দিয়েছেন সুভাষবাবু জোর দিয়ে কংগ্রেসের এক নীতি এক প্রাণের কথা ঘোষণা করেছেন।

 সুভাষবাবু দেখলেন ভাঙ্গন আসন্ন। দূর থেকে ব্যক্তিগত মতামতের সঙ্ঘর্ষ চালিয়ে, এক অপরকে জয় করার প্রবৃত্তি নিয়ে কখনও এ ভাঙ্গন রোধ করা যাবে না। দূর থেকে আপোষের চেষ্টা নিরর্থক। তাই তিনি স্বয়ং ওয়ার্ধা যাত্রা করলেন গান্ধীজীর সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করবার জন্যে। তিন ঘণ্টা ধরে আলোচনা চললো তাঁদের মধ্যে। আলোচন। শেষ করে সুভাষবাবু বেরিয়ে এসে বললেন যে যদিও তাঁদের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট উপসংহারে তাঁরা এসে পৌঁছতে পারেন নি তবুও তাঁদের আলোচনা যথেষ্ট আশাপ্রদ হয়েছে

৫৮