পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়ত ত্রিপুরীর অপমানের প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করবে। তাঁরা মনে করলেন কংগ্রেসের অন্যান্য নেতাদের হয়ত মর্যাদা হানি হতে পারে। কিন্তু সুভাষবাবু তাঁদের এই মিথ্যা আশঙ্কার প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন, যাঁরা এইরকম আশঙ্কা করতে পারেন তাঁদের বাঙ্গলা সম্বন্ধে কোন জ্ঞান নেই। এ, আই, সি সি’র মীটিং করার সুবিধা পাওয়া যে কোন প্রদেশের পক্ষে সৌভাগ্য, সম্মান ও বহু ঈপ্সিত সুযোগের বস্তু। এই ক্ষেত্রে বাঙ্গলার অধিবাসীবৃন্দ বিশেষ করে কোলকাতাবাসিরা সমস্ত ভারতের আতিথ্য গ্রহণ করবে। আমি নিশ্চিত জানি যে দেশ প্রেম ও আতিথেয়তার গর্ব বাঙ্গালী বস্তুতই করতে পারে সেই ঐতিহ্য বজায় রাখবার জন্য আমাদের অতিথিদের যতদূর সম্ভব হৃদ্য অভ্যর্থনা জ্ঞাপন ও আমাদের রীতি অনুযায়ী অতিথেয়তা প্রদর্শন করা হবে।

 এই উক্তির পর বিরুদ্ধ মন্তব্যের আর কোন সুযোগ রইল না। ১৯৩৯ সালের এপ্রিল মাসে কোলকাতায় ওয়েলিংটন স্কোয়ারে মীটিং বসলো। এবং কার্য-ক্ষেত্রে দেখা গেল সত্যিই বাঙ্গলা দেশ রাজকীয় সম্মান ও সম্বর্ধনা দেখিয়েছে তার অতিথিদের। তবে দু’একটা বিসদৃশ ও অবাঞ্ছিত ঘটনা যে ঘটেনি, তা নয়। রাজেন্দ্র প্রসাদের দিকে এক পাটি জুতোও ছোঁড়া হয়েছিল। সকলক্ষেত্রে দেখা গেছে সুভাষবাবু স্বয়ং সবার আগে দাঁড়িয়ে শান্তি, শৃঙ্খলা ও নেতাদের সম্মান রক্ষা করেছেন এবং ঐ দুর্ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন।

 দক্ষিণপন্থী দল তাঁদের সব শক্তি নিয়েই এসেছিলেন। ত্রিপুরীতে একবার যে জয় তাঁদের হয়েছে সেই জয়ের রেশ তাঁদের বজায় রাখতেই হবে। এদিকে বাঙ্গলার তরফ থেকেও যথেষ্ট চেষ্টা হয়েছে আসন্ন ভাঙ্গন থেকে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে পরিত্রাণ দেবার জন্যে। কিন্তু তাঁরাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন যাঁদের আপাতঃ উদ্দেশ্য শুধু জয়ী হওয়া মাত্র—জাতীয় ঐক্য নয়। তাই একান্ত বাধ্য হয়েই এযাবৎ সুভাষচন্দ্র যা করতে বিরত ছিলেন তাই করতে বাধ্য হলেন।

৬৩