পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিশেষতঃ ইউরোপে প্রবাসের সময় বিঠলভাই প্যাটেলের সহযোগিতায় দক্ষিণপন্থী পরিচালিত কংগ্রেসের বিরুদ্ধে যেভাবে আক্রমণ করে আসছেন তাতে এ বিষযে বিন্দুমাত্র সন্দেহ কারও থাকতে পারে না। কিন্তু ত্রিপুরী কংগ্রেসের এবং কোলকাতা কংগ্রেসের ট্রাজেডীর পরই ফরওয়ার্ড ব্লকের উৎপত্তি যখন সম্ভব হল তখন সহজেই প্রশ্ন ওঠে যে ফরওয়ার্ড ব্লক এই কোলকাতা কংগ্রেসেরই প্রতিক্রিয়া কি না!

 প্রতিক্রিয়া এ নয়। ফরওয়ার্ড্ ব্লক সুভাষচন্দ্রের জীবনের ক্রমবিকশিত স্বরূপের চরম অধ্যায় মাত্র। প্রতিক্রিয়া এই জন্য নয় যে প্রতিক্রিয়ার মধ্যে কোন ফিলজফি বা তত্ব থাকে না যা ফরওয়ার্ড ব্লকের মধ্যে পূরোমাত্রায় আছে। ফরওয়ার্ড্ ব্লকের ফিলজফি কি?

 মান্দালয় জেল থেকে মুক্তি পাবার পর থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে সুভাষচন্দ্রের যে সংঘাত শুরু হয় সে সংঘাত কংগ্রেসের উদ্দেশ্য হিসেবে কোন রকম আপোষহীন পূর্ণ স্বাধীনতার দাবী নিয়ে। লাহোর কংগ্রেসে এই পূর্ণ স্বাধীনতাই কংগ্রেসের আদর্শ হিসেবে স্বীকৃত হয় এবং এই লাহোর কংগ্রেসের এই স্বীকৃতির দিনকেই স্বাধীনতা দিবস বলে প্রতি ২৬শে জানুয়ারী সারা ভারতবর্ষ জুড়ে—এবং প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যেও নিষ্ঠার সঙ্গে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয়।

 পূর্ণ স্বাধীনতার আদর্শ সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হলেও কংগ্রেসের মধ্যে আপোষের ইচ্ছা একেবারেই লুপ্ত হয়ে যায় নি। বিশেষতঃ ১৯৩৩ সালের আন্দোলনের হঠাৎ পরিসমাপ্তিতে সুভাষচন্দ্রেব মনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় তার থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় সংঘাতের সুরু। তারপর ইউরোপের সমস্ত বক্তৃতা সমস্ত রচনার মধ্যে কংগ্রেসের এই মনোভাবের বিরুদ্ধে তাঁর অসন্তোষ শুধু তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে এবং তিনি একটি মাত্র দলের সর্বাধিনায়কত্বে ভারতের ভাগ্যনিরূপণের পরিকল্পনা করেছেন। এ সব কথা আমরা আগেই শুনেছি। যাই হোক সর্বাপেক্ষ। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, যতদিন তিনি ইউরোপে

৬৫