পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

দল—এই সবার সঙ্গে একটা মিলিত প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সোশ্যালিষ্ট পার্টির বিরুদ্ধতার জন্য এই আয়োজন সম্ভব হয় নি। দুর্ভাগ্যের কথা সন্দেহ নেই। সোশ্যালিষ্ট পার্টি বলেছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের ভবিষ্যৎ নীতির ওপর তাদের কোন আস্থা নেই। বিশেষ করে এর পররাষ্ট্র নীতি তারা মেনে নিতে পারছে না। যে সুভাষচন্দ্রকে একদিন তাদের নেতা বলে তারা গ্রহণ করেছিল তাদেরই এমন মনোভাবের কারণ কি? আমরা দেখেছি জওহরলাল নেহরু সোশ্যালিষ্ট পার্টির অন্যতম নেতা। কমিউনিজম্ ও ফ্যাসিজমের গুণাগুণ বিচার নিয়ে প্রবাসী সুভাষচন্দ্র ও ভারতের জওহরলালের সঙ্গে মনোমালিন্য শুরু হয়ে গিয়েছিল। এবং সুভাষবাবুর শারীরিক অনুপস্থিতির সময় জওহরলাল এদের উপর নিজের প্রভাব বেশ দৃঢ়ভাবেই বিস্তার কবে রেখেছিলেন। তাই ফরওয়ার্ড ব্লক সম্বন্ধে নেহরু স্পষ্টই বললেন যে এর মধ্যে নানারকম দল এসে ঢুকেছে—সুবিধাবাদী অর্থাৎ যাদের কংগ্রেসের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিবাদ আছে—তা ছাড়া আছে উগ্র জাতীয়তাবাদী দল যারা ইউরোপে যুদ্ধ শুরু হলে জার্মানী ও ইটালীকে সাহায্য করতে উন্মুখ হবে কারণ জার্মানী ও ইটালীর কাছ থেকে তারা তাদের আদর্শ নিয়েছে।

 আবিসিনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার ফলে ইটালীর ওপর অর্থাৎ ফ্যাসিজমের ওপর সকলেই বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল। সুতরাং পণ্ডিত নেহরু যখন ফরওয়ার্ড ব্লককে ইটালীর অনুগ্রাহক বলে ঘোষণা করলেন তখন দেশের মধ্যে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিরুদ্ধে একটা অসন্তোষ ঘনিয়ে উঠবে তাতে আর সন্দেহ কি? ওদিকে ফরওয়ার্ড ব্লকের তথা সুভাষচন্দ্রের কাজ হল কংগ্রেসের মধ্য থেকে ফ্যাসিবাদের যা কিছু উপকরণ আছে তাকে বিদূরিত করবার জন্য আন্দোলন করা। তাঁর মতে কংগ্রেসের কর্তৃপক্ষ গণতন্ত্রের পরিবর্তে ফ্যাসিবাদেরই অনুকরণ করে চলেছে। তিনি কংগ্রেস হাই কম্যাণ্ডকে হিটলারাইট বলে ঘোষণা করলেন। অথচ তাঁরই সৃষ্ট ফরওয়ার্ড ব্লকের নীতি হল এক নেতার

৬৭