পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৭৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হে হতভাগ্য বাঙ্গালী সুভাষচন্দ্রের এই ক্ষোভ মেটাবার দায়িত্ব কি তোমার এখনও আসে নি?

 বিবেকানন্দের শিষ্য সুভাষচন্দ্র যে মহাশক্তির উপাসক হবেন তাতে আর বিচিত্র কি? যিনি ভারতের শক্তিকে সুষুপ্তির তমসা থেকে মহান আলোকের পানে জাগ্রত করবার ব্রত নিয়েছিলেন তিনি নিজের আত্মার শক্তিকে জাগ্রত করবার জন্য মহাশক্তির আরাধনা করবেন সেইটেই স্বাভাবিক। তিনি লিখেছেন—জগতের মূল সত্য আদ্যাশক্তি, যাহা হইতে সৃষ্টি, স্থিতি প্রলয় অথবা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর—সেই আদ্যাশক্তিকে সাধক মাতৃরূপে আরাধনা ও পূজা করে থাকে। বাঙ্গালীর উপর তন্ত্রশাস্ত্রের প্রভাব খুব বেশী বলিয়া বাঙ্গালী জাতিহিসাবে মায়ের অনুরক্ত এবং ভগবানকে মায়ের রূপে আরাধনা করিতে ভালবাসে।·····বাঙ্গালী যে ভগবানকে— শুধু ভগবানকে কেন, বাঙ্গালা দেশকে এবং ভারতবর্ষকে মাতৃরূপে কল্পনা করিতে ভালবাসে—এ কথা সর্বজনবিদিত।

 অন্যত্র—

 ভয় জয় করার উপায় শক্তিসাধনা। দুর্গা কালী প্রভৃতি মূর্তি শক্তির রূপবিশেষ। শক্তির যে কোন রূপ মনে মনে কল্পনা করিয়া তাঁহার নিকট শক্তি প্রার্থনা করিলে এবং তাঁহার চরণে মনের দুর্বলতা ও মলিনতা বলিস্বরূপ প্রদান করিলে মানুষ শক্তি লাভ করিতে পারে। আমাদের মধ্যে অনন্ত শক্তি নিহিত রহিয়াছে, সেই শক্তির বোধন করিতে হইবে। পূজার উদ্দেশ্য—মনের মধ্যে শক্তির বোধন করা। প্রত্যহ শক্তিরূপ ধ্যান করিয়া শক্তিকে প্রার্থনা করিবে পঞ্চেন্দ্রিয় ও সকল রিপুকে তাঁহার চরণে নিবেদন করিবে। পঞ্চপ্রদীপ অর্থাৎ পঞ্চেন্দ্রিয়। এই পঞ্চেন্দ্রিয়ের সাহায্যে মায়ের পূজা হইয়া থাকে। আমাদের চক্ষু আছে তাই আমরা ধূপ গুগ্‌গুল্ প্রভৃতি সুগন্ধি জিনিষ দিয়া পূজা করি ইত্যাদি। বলির অর্থ রিপুর বলি— কারণ ছাগই কামের রূপবিশেষ।

 শাক্ত সুভাষচন্দ্র ও বৈষ্ণব গান্ধীজীর জীবনের আদর্শের মূল বৈষম্য এইখানেই।

৭১