পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কাটালেন সামান্য ফলমূল খেয়ে, তারপর ঘুরলেন তীর্থে তীর্থে,—গয়া, বৃন্দাবন, কাশী-কিন্তু কোথাও তাঁর মনের মানুষের সন্ধান পেলেন না। দেখলেন ধর্মগুরুর নামে কতগুলো লোক চারিদিক থেকে অন্যের ধন লুটে খাচ্ছে—কিছু দেবাব মত সম্বল ও সাহস কোনটাই তাদের নেই। সাধারণ মানুষ যাদের দুয়ার কাছে বিভ্রান্ত মন নিয়ে হাত পাতে, তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে মনের সম্পদে মোটেই যে জড়-জীবনকে ত্যাগ করতে তিনি চেয়েছিলেন তার মধ্যে তাব। আরও বিজড়িত হয়ে ডুবে আছে। তাই দু'মাস পর তিনি ফিরে এলেন।

 যে সুভাষের ওপর তার মা-বাবা অনেক কিছু আশা করেছিলেন, আশ করেছিলেন তার অন্যান্য ভাইদের মত সুভাষচন্দ্রও একদিন বিদ্যায়, অর্থে যশী হয়ে উঠবেন, মস্ত বড় সরকারী পদে অধিষ্ঠিত হয়ে নিজের প্রতিষ্ঠা অর্জন করে নেবেন—সেই সুভাষ যখন বিবাগী হয়ে বেরিয়ে পড়লেন বাড়ী ছেড়ে তখন তার মা-বাবার মন যেন ব্যর্থতায় ভেঙ্গে গেল। এমনটি ত’ তারা প্রত্যাশা করেননি তার কাছ থেকে।

 একদিন তাঁরা বাড়ীর সকলে ড্রয়িং রুমে বসে আলাপ করছেন এমন সময়ে হঠাৎ তাদের মাঝখানে এসে হাজির হলেন সুভাষচন্দ্র। বহু ঝড়-তুফান ভয করে তরী এসে পাড়ে ভিড়লো। উৎসাহে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলেন সকলে। শোনা যায় সুভাষচন্দ্র যখন মাকে প্রণাম করলেন তখন তিনি তাকে জড়িযে ধরে বলেছিলেন, তুই আমায় মারবি সুভাষ!

 আত্ম-মুক্তির সন্ধানে বনজঙ্গল ঘুরে তিনি একদিন ফিরে এসেছিলেন মাবে কোলে। কিন্তু সমস্ত ভারতবাসীর মুক্তির সন্ধানে তিনি যে মহাপ্রস্থান করেছেন -সেই মহাপ্রস্থানের পরে আবার তিনি যবে ফিরবেন সেদিন আর তার স্নেহময়ী জননীর কোল তিনি পাবেন না। সেই কোল পাতবেন দেশজননী তার সোণব মাটির অঙ্গে অঙ্গে! সেদিন আর কতদূর? মুগ্ধ বাঙ্গালী তার দিন গুনছে!