পাতা:নেতাজী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ - জ্যোতিপ্রসাদ বসু.pdf/৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সঙ্গে এক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছেন। ২৭ তারিখে ভারত-সচিব আমেরী বললেন সুভাষবাবুর সঠিক অবস্থান সম্বন্ধে জোর দিয়ে কিছু বলা চলে না।

 সুভাষবাবুর গৃহ পরিত্যাগের পর তাঁর শয্যাগৃহে বাঘছাল ও গীতা পাওয়া গেল। তাছাড়া কিছুদিন ধরে তিনি নির্জনে দিন কাটাচ্ছিলেন, ফলের রস ছাড়া কিছু খেতেন না, সব সময়েই ধ্যানে কাটাতেন। সুতরাং লোকে মনে করেছিল যে তিনি হয়ত রাজনৈতিক জীবনে বীতরাগ হয়ে শ্রীঅরবিন্দের মত ধর্ম জীবনের পথে যাত্রা করেছেন। এমন ধারণা করা খুব বিসদৃশ নয় কেন না বরাবরই তাঁর মনে ধর্ম ভাবের প্রাবল্য খুব বেশী। তাই লোকে প্রথমটা বিশ্বাস করে পারে নি যে, তিনি জার্মানীতে গিয়ে হিটলারের সঙ্গে কোন গোপন ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু সরকার পক্ষ থেকে হঠাৎ খুব প্রচার চলতে লাগলো এই ষড়যন্ত্রের। বিশেষ করে স্টেট্‌স্‌ম্যান প্রমুখ সংবাদপত্রে লেখা হতে লাগলো যে সুভাষচন্দ্র ফিফ্‌থ্ কলমিষ্ট, শত্রুপক্ষের দালাল, ফ্যাসিস্ত, দেশদ্রোহী ইত্যাদি। এমন কি তারা লিখলে যে, সুভাষবাবু বরাবরই ফ্যাসিস্ত ডিক্টেটরদের কাছ থেকে ভারতে ফিফ্‌থ কলম বা পঞ্চম বাহিনী গঠন করবার জন্যে অর্থ সাহায্য পেয়ে আসছেন। আচার্য কৃপালনী এই মিথ্য। দোষারোপের বিরুদ্ধে এক বিবৃতি দিয়েছিলেন।

 এই নিয়ে বাদানুবাদ চলছে এমন সময় ২৮শে মার্চ ১৯৪২ রয়টার লণ্ডন থেকে ঘোষণা করলেন যে, টোকিওর সংবাদে প্রকাশ সুভাষবাবু জাপানের সমুদ্রতীরে এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। সুভাষবাবু নাকি টোকিওতে স্বাধীন কংগ্রেসে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁর সঙ্গে তাঁর কয়েকজন পার্শ্বচরও নিহত হয়েছেন।

 এই মর্ম্মান্তিক সংবাদে সমস্ত দেশ সচকিত হয়ে উঠলেও মর্মাহত হল না। কারণ, সুভাষবাবুর এই মৃত্যু-সংবাদ অন্তর থেকে কেউ বিশ্বাস করতে পারে নি।

৮৫