পাতা:নেতাজী সুভাষ চন্দ্র - হেমেন্দ্রবিজয় সেন.pdf/১৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৪
নেতাজী সুভাষচন্দ্র

ট্যাঙ্কের তলায় শুইয়া পড়িত। ট্যাঙ্কগুলি ধ্বংস হইত বটে, কিন্তু সেই সঙ্গে তাহাদের দেহও চূর্ণ-বিচূর্ণ ও পিষ্ট হইয়া যাইত, এবং তাহাদের নিষ্পাপ সাহসী আত্মা অমর-ধামে চলিয়া যাইত।

 ১৯৪২ সালে আজাদ-হিন্দ ফৌজে স্বেচ্ছা-সৈন্য সংগ্রহ করিবার জন্য আহ্বান জানান হইয়াছিল। অগণিত লোক সৈন্যদলে নাম লিখিয়াছিল, কিন্তু জাপানীদের অস্পষ্ট নীতির ফলে সৈন্যদের শিক্ষাদান-কার্য্যে বেশীদূর অগ্রসর হওয়া যায় নাই। এইবার সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে অবস্থা পরিবর্ত্তিত হইল। তিনি স্পষ্ট ভাষায় এই মতামত ব্যক্ত করিলেন যে,——

 এই আজাদ হিন্দ ফৌজই ভাবতবর্ষের প্রতিনিধিলমুক জাতীয় বাহিনী। জাপানীদের সহিত ইহার কোনরূপ সংশ্রব থাকিলে ইহা বিভীষণ-বাহিনী বলিয়া কুখ্যাত হইবে। ইহার নীতি, কার্য্যকলাপ ও নেতৃত্ব ভারতীয় দেশ-প্রেমিকগণ-কর্ত্তৃকই চালিত হইবে; কোনরূপ বৈদেশিক কর্ত্তৃত্ব, অথবা একজনও বৈদেশিক সৈন্যকে ভারতভূমিতে স্বীকার করা চলিবে না। জাপানীদের ভারত আক্রমণের অধিকার নাই। জাপানীগণ যদি বলেন যে, তাঁহারা ভারতকে ব্রিটিশ-শক্তির কবল হইতে মুক্ত করিয়া স্বাধীনতা দান করিতে যাইতেছেন, তথাপি আজাদ হিন্দ ফৌজ তাহাদিগকে অন্যায় আক্রমণকারী হিসাবেই গণ্য করিবে। ভারতবর্ষকে যদি ব্রিটিশের কবল হইতে মুক্ত করিতে হয়, তবে একমাত্র ভারতের নিজস্ব বাহিনীই তাহা করিতে পারে। জাপানীদের সামরিক কৌশল ও নীতির দ্বারা এই ভারতীয় বাহিনী কখনই চালিত হইতে পারিবে না; জাপানীদের নীতির সহিত ইহার কোনরূপ সংশ্রব থাকিলে ইহা ‘পঞ্চম বাহিনী’ বলিয়া ইতিহাসে কলঙ্কভাগী হইবে।