পাতা:নেতাজী সুভাষ চন্দ্র - হেমেন্দ্রবিজয় সেন.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেতাজী সুভাষচন্দ্র
১৪৫

সেইরূপ মনে করিবে। কিন্তু মহৎ যাঁহার উদ্দেশ্য, ক্ষুদে তাঁহার তৃপ্তি কোথায়? “নাল্পে সুখমস্তি।”

 সেইজন্য মহামানবেরা আত্মসুখের প্রয়াসী হইতে পারেন না—সুভাষচন্দ্রও পারেন নাই। আই. সি. এস্. পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করিয়াও তিনি দাস-মনোবৃত্তির বশীভূত হইতে পারিলেন না—হেলায় আই. সি. এস.-পদ পরিত্যাগ করিয়া অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করতঃ কারাবাস ও নির্ব্বাসনের দুঃখ-কষ্ট মাথায় তুলিয়া লইলেন।

 সুভাষচন্দ্রের চরিত্রের মহৎ গুণ তেজস্বিতা। জীবনের প্রথমভাগে প্রেসিডেন্সী কলেজে যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আত্মপ্রকাশ করিয়াছিল, পরবর্ত্তী জীবনে তাহাই কংগ্রেসে মহাত্মা গান্ধীর আপোষ-মীমাংসাকে অসার মনে করিয়া মহাত্মার বিরুদ্ধাচরণেও কুণ্ঠিত হয় নাই এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন পণ করিয়া ভারতীয় জাতীয় বাহিনী পরিচালনায় দাবানলের সৃষ্টি করে।

 বক্তৃতা দ্বারা লোককে মুগ্ধ করিবার অসামান্য শক্তি সুভাষচন্দ্রের ছিল। সহজ ও সরল ভাষায় তাঁহার মনোমুগ্ধকর বক্তৃতা শুনিবার সৌভাগ্য যাঁহাদের হইয়াছে, তাঁহারাই সাক্ষ্য দান করিবেন যে, এমন বক্তৃতা করিবার শক্তি খুব কম লোকেরই থাকে।

 পরদুঃখে সুভাষচন্দ্রের কোমল হৃদয় কাঁদিয়া আকুল হইত। বহু বন্যা ও দুর্ভিক্ষ-পীড়িত নরনারীর সেবায় তাঁহার এই চিত্তবৃত্তির পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। যুদ্ধকালেও তাঁহার গভীর ভালবাসা ও স্নেহ-প্রবণ হৃদয় বহুবার আত্মবিকাশ করিয়াছে।

 আজাদ-হিন্দ ফৌজের অন্তর্গত ঝান্সীর রাণী-বাহিনীর মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা বয়োবৃদ্ধা ছিলেন শ্রীযুক্তা চন্দ্রমুখী দেবী। তাঁহার বয়স ৫৪ বৎসর।