পাতা:নেতাজী সুভাষ চন্দ্র - হেমেন্দ্রবিজয় সেন.pdf/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
নেতাজী সুভাষচন্দ্র

তাঁহার প্রভাব ছিল। সমুদ্রে প্রকাণ্ড ঘূর্ণাবর্ত্তের ন্যায় এই বিপুল জনসমাজে তিনি চারিদিক্ হইতে সকল প্রাণকে আকর্ষণ করিতেন *** সহকর্ম্মী বা অনুচরকে ভাল না বাসিতে পারিলে বিনিময়ে তাহার প্রাণ পাওয়া যায় না। সাধারণ সাংসারিক জীবনের ন্যায় দেশবন্ধুর আত্ম-পর-জ্ঞান ছিল না। তাঁহার বাড়ী সাধারণ সম্পত্তি হইয়া পড়িয়াছিল। সর্ব্বত্র—এমন কি, তাঁহার শয়ন-প্রকোষ্ঠেও সকলের গতিবিধি ছিল *** দেশবন্ধুর সঙ্ঘের প্রধান নিয়ম ছিল সংযম ও শৃঙ্খলা। পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য ঘটিতে পারে কিন্তু একবার কর্ত্তব্য স্থির হইয়া গেলে সকলকে সেই পন্থা অবলম্বন করিতেই হইবে। সঙ্ঘের নিয়মানুবর্ত্তী হওয়ার নিয়ম ভারতবর্ষে নূতন নয়। ২৫০০ বৎসর পূর্ব্বে ভগবান্ বুদ্ধ সর্ব্বপ্রথমে ভারতবাসীকে এই শিক্ষা দিয়া যান। আজ পর্য্যন্ত পৃথিবীর সর্ব্বত্র বৌদ্ধগণ প্রার্থনার সময় বলিয়া থাকেন—‘বুদ্ধং শরণং গচ্ছামি, ধম্মং শরণং গচ্ছামি, সঙ্ঘং শরণং গচ্ছামি।’

 বস্তুতঃ কি ধর্ম্ম প্রচার, কি স্বদেশ-সেবা, সঙ্ঘ ও সঙ্ঘানুবর্ত্তিতা ভিন্ন কোন মহৎ কাজ জগতে সম্ভবপর নয়। *** বাংলার বৈষ্ণবধর্ম্ম ও দ্বৈতাদ্বৈতবাদ দেশবন্ধুকে নাস্তিকতা হইতে টানিয়া লইয়া নীরস বেদান্তের ভিতর দিয়া প্রেমমার্গে লইয়া গিয়াছিল।*** বাংলার শিক্ষা ও সভ্যতার সার সঙ্কলন করিয়া তাহাতে রূপ দিলে যেরূপ মানুষের উদ্ভব হয়, দেশবন্ধু অনেকটা সেইরূপ ছিলেন *** জীবনে-মরণে শয়নে-স্বপনে তাঁহার ছিল এক ধ্যান—এক চিন্তা—স্বদেশ-সেবা—এবং সেই স্বদেশসেবাই তাঁহার ধর্ম্মজীবনের সোপান-স্বরূপ।”

—দেশবন্ধু স্মৃতি, পৃঃ ৫৪৩-৬৫

 অবশেষে সুভাষচন্দ্রের দেহে ক্ষয়-রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাইতে থাকে। তাঁহার স্বাস্থ্য পরীক্ষার্থ তাঁহাকে রেঙ্গুণ হইতে কলিকাতায় আনিয়া ব্যারাকপুরের নিকট গঙ্গাবক্ষে