পাতা:নেপালে বঙ্গনারী - হেমলতা দেবী.pdf/৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নেপালের বৌদ্ধমন্দির।
৪৯

অঙ্কিত দেখা যায়, মাঞ্জুশ্রীর চরণে চক্ষুও বুদ্ধের চরণে চক্র দেখা যায়। উপত্যকা হইতে প্রস্তরনির্ম্মিত সোপানাবলী দিয়া পর্ব্বতশিখরে স্বয়ম্ভূনাথের মন্দিরে উঠিতে হয়। এই সোপানশ্রেণী অতিক্রম করা বড় সহজ ব্যাপার নহে। সোপানশ্রেণীর পাদদেশে বুদ্ধদেবের প্রস্তরনির্ম্মিত ধ্যানমগ্ন এক প্রকাণ্ড মূর্ত্তি দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার বামে ধর্ম্ম এবং দক্ষিণে সঙ্ঘের ক্ষুদ্র মূর্ত্তি আছে। ১৬৩৭ সালে এই বুদ্ধমূর্ত্তি নেপালরাজ প্রতাপমল্ল প্রতিষ্ঠিত করিয়াছিলেন। সোপানাবলীতে আরও কিছু দূর অগ্রসর হইলে পথের উভয় পার্শ্বে সর্পোপরি গরুড়ের প্রস্তরমূর্ত্তি দেখিতে পাওয়া যায়। গরুড়ের মস্তকে বুদ্ধ অমোঘসিদ্ধের ক্ষুদ্র প্রতিমূর্ত্তি আছে। হিন্দুদিগের উপাস্য গরুড় বুদ্ধের বশ্যতা স্বীকার করিয়া মন্দিরের দ্বাররক্ষকরূপে নিযুক্ত হইয়াছেন ইহাই প্রতিপন্ন করা হইয়াছে। এই ভাবেই অনেক বৌদ্ধমন্দিরে গরুড় গণেশ প্রভৃতি হিন্দু-দেবদেবীর প্রতিমূর্ত্তি দেখা যায়। কিন্তু বর্ত্তমান সময়ে বৌদ্ধগণ পূর্ব্বের উদ্দেশ্য বিস্মৃত হইয়া হিন্দু-দেবদেবীগণের পূজা করিয়া থাকেন। সোপানাবলী দিয়া উঠিয়াই মন্দিরের সম্মুখে প্রকাণ্ড স্বর্ণবর্ণের বজ্র দেখিতে পাওয়া যায়। ইহাও নেপালরাজ প্রতাপমল্ল কর্ত্তৃক স্থাপিত হইয়াছে। বৌদ্ধমন্দিরে বজ্রের সার্থকতা কি তাহা প্রথমে নির্ণয় করা দুঃসাধ্য। বজ্রটী ইন্দ্রের, বুদ্ধকর্ত্তৃক হিন্দুদেবতা ইন্দ্রের পরাজয়ের চিহ্নস্বরূপ আদিবুদ্ধের মন্দিরের দ্বারদেশে বজ্রটী স্থাপিত হইয়াছে। বজ্রের সম্মুখে স্বয়ম্ভূর মন্দির; কিন্তু ইহাকে মন্দির বলিলে ঠিক্ হইবে না, ইহা মন্দির নয়, প্রকাণ্ড স্তুপ।