পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

৬২

 কমলা বাড়ি ফিরিয়া আসিয়া দেখিল, অন্নদাবাবু ও হেমনলিনী ক্ষেমংকরীর কাছে বসিয়া আছে। কমলাকে দেখিয়া ক্ষেমংকরী কহিলেন, “এই-যে হরিদাসী, তোমার বন্ধুকে তোমার ঘরে লইয়া যাও, বাছা। আমি অন্নদাবাবুকে চা খাওয়াইতেছি।”

 কমলার ঘরে প্রবেশ করিয়াই হেমনলিনী কমলার গলা ধরিয়া কহিল, “কমলা!”

 কমলা খুব বেশি বিস্মিত না হইয়া কহিল, “তুমি কেমন করিয়া জানিলে আমার নাম কমলা।“

 হেমনলিনী কহিল, “একজনের কাছে আমি তোমার জীবনের ঘটনা সব শুনিয়াছি; যেমনি শুনিলাম অমনি তখনই আমার মনে সন্দেহ রহিল না, তুমিই কমলা। কেন যে তা বলিতে পারি না।”

 কমলা কহিল, “ভাই, আমার নাম যে কেহ জানে সে আমার ইচ্ছা নয়। আমার নিজের নামে একেবারে ধিক্‌কার জন্মিয়া গেছে।”

 হেমনলিনী কহিল, “কিন্তু এই নামের জোরেই তো তোমাকে তোমার অধিকার পাইতে হইবে।”

 কমলা মাথা নাড়িয়া কহিল, “ও আমি বুঝি না। আমার জোর কিছুই নাই, আমার অধিকার কিছুই নাই, আমি জোর খাটাইতেই চাই না।”

 হেমনলিনী কহিল, “কিন্তু তোমার স্বামীকে তোমার পরিচয় হইতে বঞ্চিত করিবে কী বলিয়া। তোমার ভালোমন্দ সবই কি তাঁহার কাছে নিবেদন করিবে না। তাঁর কাছে কি কিছু লুকানো চলিবে।”

 হঠাৎ কমলার মুখ যেন বিবর্ণ হইয়া গেল; সে কোনো উত্তর খুঁজিয়া না পাইরা নিরুপায়ভাবে হেমনলিনীর মুখের দিকে তাকাইয়া রহিল।

৩৮৪