পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অন্নদাবাবু কথাটাকে গভীরভাবে লইয়া বিস্তারিতরূপে প্রমাণ করিতে বসিলেন যে, ভাবুক হইলেও হজম করাটা চাইই।

 রমেশ নীরবে বসিয়া মনে মনে দগ্ধ হইতে লাগিল।

 অক্ষয় কহিল, “রমেশবাবু, আমার পরামর্শ শুনুন— অন্নদাবাবুর পিল খাইয়া একটু সকাল-সকাল শুইতে যান।”

 রমেশ কহিল, “অন্নদাবাবুর সঙ্গে আজ আমার একটু বিশেষ কথা আছে, সেইজন্য আমি অপেক্ষা করিয়া আছি।”

 অক্ষয় চৌকি ছাড়িয়া উঠিয়া কহিল, “এই দেখুন, এ কথা পূর্বে বলিলেই হইত। রমেশবাবু সকল কথা পেটে রাখিয়া দেন, শেষকালে সময় হখন প্রায় উত্তীণ ভইয়া যায় তখন ব্যস্ত হইয়া উঠেন।”

 অক্ষয় চলিয়া গেগে রমেশ নিজের জুতাজোড়াটার প্রতি দুই নত চক্ষু বন্ধ রাখিয়া বলিতে লাগিল, “অন্নদাবাবু, আপনি আমাকে আত্মীয়ের মতো আপনার ঘরের মধ্যে যাতায়াত করিবার অধিকার দিয়াছেন, ইহা আমি যে কত সৌভাগ্যের বিষয় বলিয়ক জ্ঞান করি তাহা আপনাকে মুখে বলিয়া শেষ করিতে পারি না।”

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “বিলক্ষণ! তুমি আমাদের যোগেনের বন্ধু, তোমাকে ঘরের ছেলে বলিয়া মনে করিব না তো কী করিব।”

 ভূমিকা তো হইল, তাহার পরে কী বলিতে হইবে রমেশ কিছুতেই ভাবিয়া পায় না। অন্নদাবাবু রমেশের পথ সুগম করিয়া দিবার জন্য কহিলেন, “রমেশ, তোমার মতো ছেলেকে ঘরের ছেলে করিতে পারা আমার কি কম সৌভাগ্য।”

 ইহার পরেও রমেশের কথা জোগাইল না।

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “দেখো-না, তোমাদের সম্বন্ধে বাহিরের লোক অনেক কথা বলিতে আরম্ভ করিয়াছে। তাহারা বলে হেমনলিনীর

৪৮