পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

লক্ষণ চাপিয়া ঈষৎ হাস্য করিয়া কহিল, “অক্ষয় বলিয়া ঢের লােক বোধ হয় জেলখানায় আছে।”

 অক্ষয় কহিল, “ওই দেখুন, বন্ধুভাবে সৎপরামর্শ দিতে গেলে আপনারা রাগ করেন। তবে সমস্ত ইতিহাসটা বলি। আপনি তাে জানেন, আমার ছােটো বােন শরৎ বালিকা-বিদ্যালয়ে পড়িতে যায়। সে কাল সন্ধ্যার সময় আসিয়া কহিল, ‘দাদা, তােমাদের রমেশবাবুর স্ত্রী আমাদের ইস্কুলে পড়েন’।”

 “আমি বলিলাম, ‘দূর পাগলী, আমাদের রমেশবাবু ছাড়া কি আর দ্বিতীয় রমেশবাবু জগতে নাই!’ শরৎ কহিল, ‘তা যেই হোন, তিনি তাঁর স্ত্রীর উপরে ভারি অন্যায় কলিতেছেন। ছুটিতে প্রায় সব মেয়েই বাড়ি যাইতেছে— তিনি তাঁর স্ত্রীকে বোর্ডিঙে রাখিবার বন্দোবস্ত করিয়াছেন। সে বেচারা কাঁদিয়া কাটিয়া অনর্থপাত করিতেছে।’ আমি তখনি মনে মনে কহিলাম, ‘এ তাে ভালো কথা নহে, শরৎ যেমন ভুল করিয়াছিল, এমন ভুল আরো তো কেহ কেহ করিতে পারে।”

 অন্নদাবাবু হাসিয়া উঠিয়া কহিলেন, “অক্ষয়, তুমি কী পাগলের মতাে কথা কহিতেছ। কোন রমেশের স্ত্রী ইস্কুলে পড়িয়া কাঁদিতেছে বলিয়া আমাদের রমেশ নাম বদলাইবে নাকি।”

 এমন সময় হঠাৎ বিবর্ণমুখে রমেশ গল্প হইতে উঠিয়া চলিয়া গেল। অক্ষয় বলিয়া উঠিল, “ও কী রমেশবাবু, আপনি রাগ করিয়া চলিয়া গেলেন নাকি। দেখুন দেখি, আপনি কি মনে করেন আপনাকে আমি সন্দেহ করিতেছি।”— বলিয়া রমেশের পশ্চাৎ পশ্চাৎ বাহির হইয়া গেল।

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “এ কী কাণ্ড।”

 হেমনলিনী কাঁদিয়া ফেলিল। অন্নদাবাবু ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “ও কী হেম, কাঁদিস কেন।”

৫৩