পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 সে উচ্ছসিত রোদনের মধ্যে রুদ্ধকণ্ঠে কহিল, “বাবা, অক্ষয়বাবুর ভারি অন্যায়। কেন উনি আমাদের বাড়িতে ভদ্রলোককে এমন করিয়া অপমান করেন।”

 অন্নদাবাবু কহিলেন, “অক্ষয় ঠাট্টা করিয়া একটা কী বলিয়াছে, ইহাতে এত অস্থির হইবার কী দরকার ছিল।”

 “এ রকম ঠাট্টা অসহ্য।”— বলিয়া দ্রুতপদে হেমনলিনী উপরে চলিয়া গেল।

 এই কলিকাতায় আসার পর বশে বিশেষ যত্নের সহিত কমলার স্বামীর সম্মান করিতেছিল। বহু কষ্টে ধোবাপুকুরটা কোন্ জায়গায় তাহা বাহির করিয়া কমলার মামা তারিণীচরণকে এক পত্র লিখিয়াছিল।

 উক্ত ঘটনার পরদিন রাতে রমেশ সেই পত্রের জবাব পাইল। তারিণীচরণ লিখিতেছেন- দুর্ঘটনার পরে তাঁহার জামাতা শ্রীমান্ নলিনাক্ষের কোনো সংবাদই পাওয়া যায় নাই। রংপুরে তিনি ডাক্তারি করিতেন— সেখানে চিঠি লিখিয়া তারিণীচরণ জানিয়াছেন, সেখানেও কেহ আজ পর্যন্ত তাঁহার কোনো খবর পায় নাই। তাঁহার জন্মস্থান কোথায় তাহা তারিণীচরণের জানা নাই।

 কমলার স্বামী নলিনাক্ষ যে বাঁচিয়া আছে, এ আশা রমেশের মন হইতে একেবারে দূর হইল।

 সকালে রমেশের হাতে আরও অনেকগুলা চিঠি আসিয়া পড়িল। বিবাহের সংবাদ পাইয়া তাহার আলাপী পরিচিত অনেকে তাহাকে অভিনন্দন-পত্র লিখিয়াছে। কেহ-বা আহারের দাবি জানাইয়াছে, কেহ-বা এত দিন সমস্ত ব্যাপারটা সে গোপন রাখিয়াছে বলিয়া রমেশকে সকৌতুক তিরস্কার করিয়াছে।

৫৪