পাতা:নৌকাডুবি-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়িলেন; কহিলেন, “বিলম্ব করিলে চলিবে না। বেশ কথা, অতি উত্তম কথা। এখন তোমার যাহা ইচ্ছা হয় করো। নিমন্ত্রণ ফিরাইয়া লইবার ব্যবস্থা তোমার বুদ্ধিতে যারা আসে তাহাই হোক। লোকে যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করিবে আমি বলিব, ‘আমি ও-সব কিছুই জানি না—তাঁহার কী আবশ্যক সে তিনিই জানেন, আর কবে তাঁহার সুবিধা হইবে সে তিনিই বলিতে পারেন।’“

 রমেশ উত্তর না করিয়া নতমুখে বসিয়া রহিল। অন্নদাবাবু কহিলেন, “হেমনলিনীকে সব কথা বলা হইয়াছে?”

 রমেশ। না, তিনি এখনো জানেন না।

 অন্নদা। তাঁহার তো জানা আবশ্যক। তোমার তো একলার বিবাহ নয়।

 রমেশ। আপনাকে আগে জানাইয়া তাঁহাকে জানাইব স্থির করিয়াছি।

 অন্নদাবাবু ডাকিয়া উঠিলেন, “হেম, হেম।”

 হেমনলিনী ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া বলিল, “কী বাবা।”

 অন্নদা। রমেশ বলিতেছেন, উঁহার কী একটা বিশেষ কাজ পড়িয়াছে, এখন উঁহার বিবাহ করিবার অবকাশ হইবে না।

 হেমনলিনী একবার বিবর্ণমুখে রমেশের মুখের দিকে চাহিল। রমেশ অপরাধীর মতো নিরুত্তরে বসিয়া রহিল।

 হেমনলিনীর কাছে এ খবরটা যে এমন করিয়া দেওয়া হইবে রমেশ তাহা প্রত্যাশা করে নাই। অপ্রিয় বার্তা অকস্মাৎ এইরূপ নিতান্ত রূঢ়ভাবে হেমনলিনীকে যে কিরূপ মর্মান্তিকরূপে আঘাত করিল রমেশ তাহা নিজের ব্যথিত অন্তঃকরণের মধ্যেই সম্পূর্ণ অনুভব করিতে পারিল। কিন্তু যে তীর একবার নিক্ষিপ্ত হয় তাহা আর ফেরে না—রমেশ যেন

৫৯