পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৮

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রাঞ্জলতা

থাকা উচিত, নতুবা মেঘমুক্ত সূর্যের গৌরব বুঝা যায় না, আমার বোধ হয় পৃথিবীর বড়ো বড়ো খ্যাতির উপরে মাঝে মাঝে সেইরূপ অবহেলার আড়াল পড়া উচিত— মাঝে মাঝে গ্রীক মূর্তির নিন্দা করা ফেশান হওয়া ভালো, মাঝে মাঝে সর্বলোকের নিকট প্রমাণ হওয়া উচিত যে কালিদাস অপেক্ষা চাণক্য বড়ো কবি। নতুবা আর সহ্য হয় না। যাহা হউক, ওটা একটা অপ্রাসঙ্গিক কথা। আমার বক্তব্য এই যে, অনেক সময়ে ভাবের দারিদ্র্যকে, আচারের বর্বরতাকে সরলতা বলিয়া ভ্রম হয়— অনেক সময় প্রকাশক্ষমতার অভাবকে ভাবাধিক্যের পরিচয় বলিয়া কল্পনা করা হয়— সে কথাটাও মনে রাখা কর্তব্য।’

 আমি কহিলাম, ‘কলাবিদ্যায় সরলতা উচ্চ অঙ্গের মানসিক উন্নতির সহচর। বর্বরতা সরলতা নহে। বর্বরতার আড়ম্বর আয়োজন অত্যন্ত বেশি। সভ্যতা অপেক্ষণকৃত নিরলংকার। অধিক অলংকার আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিন্তু মনকে প্রতিহত করিয়া দেয়। আমাদের বাংলা ভাষায় কি খবরের কাগজে কি উচ্চশ্রেণীর সাহিত্যে সরলতা এবং অপ্রমত্ততার অভাব দেখা যায়— সকলেই অধিক করিয়া, চীৎকার করিয়া, এবং ভঙ্গিমা করিয়া বলিতে ভালোবাসে; বিনা আড়ম্বরে সত্য কথাটি পরিষ্কার করিয়া বলিতে কাহারও প্রবৃত্তি হয় না। কারণ, এখনো আমাদের মধ্যে একটা আদিম বর্বরতা আছে; সত্য প্রাঞ্জল বেশে আসিলে তাহার গভীরতা এবং অসামান্যতা আমরা দেখিতে পাই না, ভাবের সৌন্দর্য কৃত্রিম ভূষণে এবং সর্বপ্রকার আতিশয্যে ভারাক্রান্ত হইয়া না আসিলে আমাদের নিকট তাহার মর্যাদা নষ্ট হয়।’

 সমীর কহিল, ‘সংযম ভদ্রতার একটি প্রধান লক্ষণ। ভদ্রলোকেরা কোনো প্রকার গায়ে-পড়া আতিশয্য দ্বারা আপন অস্তিত্ব উৎকট ভাবে প্রচার করে না; বিনয় এবং সংযমের দ্বারা তাহারা আপন মর্যাদা

১০৮