পাতা:পঞ্চভূত - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কৌতুকহাস্যের মাত্রা

 দ্বিতীয় কথা এই যে, তাঁহাদের হাস্য হইতে আমরা তত্ত্ব বাহির করিব এ কথা তাঁহারা যেমন কল্পনা করেন নাই, আমাদের তত্ত্ব হইতে তাঁহারা যে যুক্তি বাহির করিতে বসিবেন তাহাও আমরা কল্পনা করি নাই।

 নিউটন আজন্ম সত্যান্বেষণের পর বলিয়াছেন, ‘আমি জ্ঞানসমুদ্রের কুলে কেবল নুড়ি কুড়াইয়াছি।’ আমরা চার বুদ্ধিমানে ক্ষণকালের কথোপকথনে নুড়ি কুড়াইবার ভরসা ও রাখি না, আমরা বালির ঘর বাঁধি মাত্র। ঐ খেলাটার উপলক্ষ্য করিয়া জ্ঞানসমূদ্র হইতে খানিকটা সমুদ্রের হাওয়া খাইয়া আসা আমাদের উদ্দেশ্য। রত্ন লইয়া আসি না, খানিকটা স্বাস্থ্য লইয়া আসি; তাঙ্গর পর সে বালির ঘর ভাঙে কি থাকে তাহাতে কাহারও কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি নাই।

 রত্ন অপেক্ষ স্বাস্থ্য যে কম বহুমূল্য, আমি তাহা মনে করি না। রত্ন অনেক সময় ঝুঁটা প্রমাণ হয়, কিন্তু স্বাস্থ্যকে স্বাস্থ্য ছাড়া আর কিছু বলিবার জো নাই। আমরা পাঞ্চভৌতিক সভার পাঁচ ভূতে মিলিয়া এ পর্যন্ত একটা কানাকড়ি দামের সিদ্ধান্তও সংগ্রহ করিতে পারিয়াছি কি না সন্দেহ, কিন্তু তব যত বার আমাদের সভা বসিয়াছে আমরা শূন্যহস্তে ফিবিয়া আসিলেও আমাদের সমস্ত মনের মধ্যে যে সবেগে রক্তসঞ্চালন হইয়াছে এবং সে জন্য আনন্দ এবং আরোগ্য লাভ করিয়াছি তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই।

 গড়ের মাঠে এক ছটাক শস্য জন্মে না, তবু অতটা জমি অনাবশ্যক নহে। আমাদের পাঞ্চভৌতিক সভাও আমাদের পাঁচ জনের গড়ের মাঠ; এখানে সত্যের শস্য-লাভ করিতে আসি না, সত্যের আনন্দ-লাভ করিতে মিলি।

 সেই জন্য এ সভায় কোনো কথার পুরা মীমাংসা না হইলেও ক্ষতি

১১৯